‌নিজের ব্যর্থতার ঢাক পেটাতেও প্রধানমন্ত্রীর জুড়ি নেই

সরল বিশ্বাস

নিজের সাফল্যের বিজ্ঞাপন অনেকেই করে থাকেন। নিজের ঢাক অনেকেই পিটিয়ে থাকেন। কিন্তু নিজের ব্যর্থতার বিজ্ঞাপন কেউ এভাবে করে?‌ আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে না দেখলে জানাই যেত না। কোনটা তাঁর সাফল্য আর কোনটা তাঁর ব্যর্থতা, নিজেই বোধ হয় ঠিকঠাক বোঝেন না।

তিনি একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী। এবং শাসকদলের নেতা। মাঝে মাঝেই তিনি দ্বিতীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। অর্থাৎ, শাসক দলের নেতা হয়ে ওঠেন, বিরোধীদের গালমন্দ করেন। তখন তিনি ভুলে যান যে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। দেশের প্রশাসন চালানো আসলে তাঁরই দায়িত্ব।

সম্প্রতি তিনি একটি সরকারি সভায় ও একটি দলীয় সভায় তৃণমূলকে আক্রমণ করলেন। প্রথম সভায় নাম না করে, দ্বিতীয় সভায় নাম করে। একবার বললেন, ‘‌কোনও কোনও রাজ্য সরকার চাকরির সিন্ডিকেট চালাচ্ছে। কোন পোস্টে কত টাকা নেওয়া হবে, তার রেটকার্ড ঠিক করে দিচ্ছে।’‌ অন্যটি ছিল দলীয় সভা। এখানে তিনি সারদা, এসএসসি, বালি, কয়লা ইত্যাদি প্রসঙ্গ টেনে আনলেন।

অন্যের সমালোচনা করতে গিয়ে আসলে নিজের গালেই ঠাস করে চড় কষালেন। আসলে, নিজের ব্যর্থতাই তুলে ধরলেন। তাঁর সরকারের মেয়াদ ৯ বছর। আর এই ৯ বছর ধরেই সারদার সিবিআই তদন্ত চলছে। তদন্তের নামে কী অষ্টরম্ভা হয়েছে, এতদিনে সবাই বুঝতে পারছেন। সিবিআই কার অধীনে?‌ এত বছর পরেও তদন্ত দশ পারসেন্টও এগোলো কেন?‌ যাঁরা আসল অভিযুক্ত, যাঁদের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করা তেমন কোনও ব্যাপারই ছিল না, সেই তদন্ত ধামাচাপা পড়ে গেল কেন?‌ এর উত্তর তো তাঁকেই দিতে হবে। মূল অভিযুক্তদের সঙ্গে দরজা বন্ধ করে তিনিই বৈঠক করেন। একথা বিশ্বাস করতে হবে, সেই গোপন বৈঠকে তদন্ত নিয়ে কোনও কথা হয়নি!‌

এবার এসএসসি কান্ড। এক বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত চলছে। দু একটা চুনোপুটি ধরা পড়ছে। দু একটা এজেন্ট ধরা পড়ছে। আসল মাথাদের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারছে না সিবিআই বা ইডি। যেটুকু করছে, আদালতের কানমলা খেয়ে। এই নজরদারিটুকু যদি না থাকত, এই তদন্তও কোনকালে ঠান্ডাঘরে চলে যেত। যে তদন্ত কার্যত সাতদিনে করে ফেলা যায়, সেই তদন্ত করতে এতদিন লাগছে!‌ প্রমাণ লোপাটের পর্যাপ্ত সুযোগ কি দেওয়া হচ্ছে না?‌ সাদা চোখে অপরাধ দেখা যাচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে। এর জন্য সিবিআই বা ইডি হওয়ার দরকার নেই। আগেকার দিনের ননী দারোগা, পাঁচু দারোগারাই যথেষ্ট। অথচ, তারপরও দিনের পর দিন পর্বতের মূষিক প্রসব করে চলেছে সিবিআই, ইডি।

এবার কয়লা–‌গরু। কয়লা পাহারার মূল দায়িত্ব কার?‌ সিআইএসএফ। তারা কার অধীনে?‌ সবাই জানে, কোন কোন খাদানে বেআইনি কয়লা তোলা হয়। সবাই জানে, কোন পথ দিয়ে তা কোন পথে পাচার হয়। সবাই জানে, এর লভ্যাংশ কার মারফত কার কাছে যায়। সবাই জানে, শুধু সিআইএসএফ জানে না। সবাই জানে, শুধু সিবিআই জানে না। তাই তিন বছর ধরে, আজ একে ডাকছে, ছমাস পর ওকে ডাকছে। এই দীর্ঘসূত্রিতায় এক পান্ডা দেশ ছেড়ে ভিন দেশের নাগরিক হয়ে গেল। বাকিরা এন্তার প্রমাণ লোপাট করে গেল। সাক্ষীদের একে একে খুন করে ফেলা হল। সিবিআই এখনও বুড়ো আঙুল চুষছে। এবার গরু। এত রাজ্যের করিডোর দিয়ে আসছে। সেই সব রাজ্যে কাদের পুলিশ থাকে?‌ এবার সীমান্ত দিয়ে অন্য দেশে পাচার। সীমান্ত রক্ষার দায় কার?‌ বিএসএফ। তারা জানে না, অথচ লক্ষ লক্ষ গরু পাচার হয়ে যাচ্ছে!‌ এটা বিশ্বাসযোগ্য?‌ এই লভ্যাংশ কোথায় কোথায় যায়, সবাই জানে, শুধু সিবিআই জানে না। প্রথম কথা, কয়লা–‌গরু পাচারটা যে তাঁর প্রশাসনের ব্যর্থতা, এটুকু বোঝার মতো বিদ্যেবুদ্ধি একজন প্রধানমন্ত্রীর থাকবে না?‌

তাই অন্যের দিকে আঙুল তুলছেন ঠিকই। আসলে, আঙুলটা তাঁর নিজের দিকেই উঠছে। নিজের ব্যর্থতাকেই বেআব্রু করে চলেছেন। সেই কতকাল আগে অটল বিহারী বাজপেয়ী তাঁকে বলেছিলেন, রাজধর্ম পালন করতে। সেই শিক্ষা আজও নিতে পারেননি। রাজধর্ম থেকে তিনি আলোকবর্ষ দূরে। তিনি শুধু বাজার গরম করতেই জানেন। কিন্তু প্রশাসন চালানো তাঁর কম্ম নয়।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.