বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: কোন কথাটা কোথায় বলতে হয় আর কোন কথাটা কোথায় বলতে নেই? এই পরিমিতি বোধটা ইদানীং অনেকের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে না। এমনকী স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীরাও এই রোগ থেকে মুক্ত নন। এক দুটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ভুরি ভুরি উদাহরণ তুলে ধরা যায়। ধারাবাহিকভাবে এইসব নমুনা তাঁরা রেখে যাচ্ছেন।
এবার মঞ্চ বিধানসভা। স্বল্পকালীন এই অধিবেশন ডাকা হয়েছে মূলত মুখ্যমন্ত্রীকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য করার জন্য। মন্ত্রিসভায় পাস হয়ে গেছে। এবার বিধানসভায় বিল পাস করার কথা। শুধু এই এজেন্ডাকে সামনে রেখে অধিবেশন ডাকতে হল! বোঝাই যাচ্ছে, বিধানসভার কাজ কম পড়িয়াছে।
যাই হোক, শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত তরজায় আসা যাক। বিরোধী দলনেতাকে লক্ষ্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলে বসলেন, পুরুলিয়ায়, মালদা, মুর্শিদাবাদে, মেদিনীপুরে কে টাকা তুলেছিল? বুঝিয়ে দিলেন, এই সব জেলায় প্রাইমারি ও এসএসসিকে ঘিরে প্রচুর টাকার লেনদেন হয়েছে। এবং মন্ত্রী থাকার সময় এই লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত শুভেন্দু অধিকারী।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ একেবারেই মিথ্যে এমনটা বলা যাবে না। এটা ঘটনা, এইসমস্ত জেলায় অনেক আগে থেকেই এই মর্মে গুঞ্জন ছিল। সেই জেলার তৃণমূল নেতারাই নাকি চাকরির জন্য ধরতেন শুভেন্দুকে। সবাই জানতেন অথচ মুখ্যমন্ত্রী জানতেন না, এমন তো হতে পারে না।
তাই মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ যদি সত্যি হয়, যদি সত্যিই এইসব জেলায় নিয়োগের পেছনে শুভেন্দুর বড় ভূমিকা থেকে থাকে, তাহলে এই দায় মুখ্যমন্ত্রীর নয়? তার চেয়েও বড় কথা, শিক্ষাদপ্তরের আস্ত একজন মন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও পরিবহণ মন্ত্রী কিনা শিক্ষকের চাকরি দিচ্ছেন! তাহলে শিক্ষামন্ত্রীকে কতটা ঠুঁটো জগন্নাথ করে রেখেছিলেন, নিজেই বুঝে দেখুন। শিক্ষামন্ত্রীকে টপকে পরিবহণ মন্ত্রীর লিস্টে চাকরি হচ্ছে, এটা মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া হতে পারে?
তার মানে কি এইসব জেলা শুভেন্দুর জন্য ছেড়ে রাখা হয়েছিল? তুমি এইসব জেলায় যা পারছো করো, আমি দেখতে যাব না। এই বোঝাপড়ায় কি তাঁকে তুষ্ট রাখা হয়েছিল? যখন শুভেন্দুর চাহিদা আরও বেড়ে গেল, যখন মনে হল, এই লোকটা একা অনেক টাকা তুলে নিচ্ছে, তখন দলীয় পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেওয়া হল?
সুতরাং, শুভেন্দুর দিকে প্রশ্ন তুলতে গিয়ে আসলে নিজেকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ফেললেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিণাম না বুঝে অতিরিক্ত বলতে গেলে, বাক সংযম না থাকলে এমনটাই হয়।