অন্তরা চৌধুরী
ছোটবেলায় স্বাধীনতা দিবস কাকে বলে অত বুঝতাম না। স্কুলে সেদিন ক্লাস হবে না। কিন্তু ভোরবেলায় উঠে একবার স্কুল যেতে হবে। কারও খালি হাতে যাওয়া চলবে না। সবাইকেই বাড়ি থেকে অল্প করে হলেও ফুল নিয়ে যেতে হবে। স্বাধীনতা দিবস মানে আরও পাঁচটা ছুটির দিনের মতই। আলাদা কোনও বিশেষত্ব ছিল না।
ভোরবেলায় উঠে একটা প্লাস্টিকে অনেকরকম ফুল নিয়ে স্কুলে যেতাম। হেডমাস্টারমশাই নির্দিষ্ট সময়ে পতাকা উত্তোলন করতেন। পতাকার ভেতরে থাকত হরেকরকম ফুল। সেগুলো ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ত। শিশুমন অবাক হয়ে যেত। তারপরেই হত জাতীয় সঙ্গীত। বন্দেমাতরম শ্লোগান। কী বলছি, কেন বলছি অত বুঝতাম না।
স্যাররা সবাই বক্তৃতা দিতেন। এককান দিয়ে ঢুকত এককান দিয়ে বেরিয়ে যেত। শুধু ভাবতাম, কতক্ষণে চকলেট দেবে! সবশেষে চকলেট বিতরণের পালা। তখনকার দিনে বাংলা পাঁচের মতো দেখতে একরকম চকলেট পাওয়া যেত। সেই চকলেট সকলকে চারটে করে দেওয়া হত। সেই চারটে চকলেট নেবার জন্য সে কী আকূল প্রতীক্ষা! একটা খেতে খেতে আসতাম। আর বাকিগুলো হাতে ধরাই থাকত বাড়ি গিয়ে খাব বলে। কিন্তু বাড়ি যখন পৌঁছতাম তখন সেগুলো প্রায় গলে গেছে। ছোট্ট ছোট্ট হাতে চকলেটের ঝোল। ইস! এখন ভাবলে কেমন লাগে।
আরেকটু উঁচু ক্লাসে তখন দিত লুচি, আলুরদম আর বোঁদে। বিচ্ছু ছেলের অভাব কোনওকালেই আমাদের সমাজে ছিল না। সবাই খেয়ে দেয়ে নিজেদের মধ্যে শ্লোগান দিতে দিতে বাড়ি যেত-
‘বন্দেমাতরম
বোঁদে খেয়ে পেট গরম’।
আমরা মুখ টিপে সবাই হাসতাম। এদের মধ্যে কিছু একেবারে বখে যাওয়া ছেলে ছিল।
তারা আবার আরেককাঠি ওপরে শ্লোগান দিত-
‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা
ছাগলের পঁচিশটি বাচ্ছা
আআআআআআআআআ’
নিছক মজা। কাউকে অসম্মান করার জন্য তারা নিশ্চয় এসব বলত না। কী ভালই না ছিল না বুঝে পালন করা সেই স্বাধীনতা দিবস! মাঝে মাঝে মনে হয়, সেই না বোঝার দিনগুলোই বোধ হয় ভাল ছিল। কেন যে বেশি বুঝতে গেলাম!