রাতুল সেন
জেলার নেতাদের বড়ই দুঃখ। বড় বড় প্রকল্পের উদ্বোধনের ফলকে তাঁদের নাম থাকে না। এমনকী পাড়ার রাস্তা, শৌচালয়, পঞ্চায়েতের কাজকর্ম— সেগুলোও চলে যায় মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের খতিয়ানে। তিনি জেলা সফর করলেই একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস আর একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন। সংখ্যায় বাড়াতে হবে। তাই জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতির কাজকর্মও ঢুকে যায় সেই তালিকায়। পরম আনন্দে সেইসব উদ্বোধন করেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী।
গত সাত মাস সেভাবে জেলা সফর হচ্ছিল না। শিলিগুড়ি, ঝাড়গ্রাম দিয়ে সফর শুরু হয়েছে। আবার সেই প্রশাসনিক সভা। আবার ঘটা করে উদ্বোধন আর শিলান্যাস। দেখতে দেখতেই এসে গেল দুর্গাপুজো। পুজো এলে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যস্ততা বহুগুন বেড়ে যায়। উত্তর থেকে দক্ষিণ, কলকাতার নানা প্রান্তে উদ্বোধন করতে হয়।
এতদিন জেলার নেতারা জেলার উন্নয়ন প্রকল্পে উদ্বোধন করতে না পারলেও পুজোগুলো অন্তত পড়েছিল। ডজনখানের পুজো উদ্বোধনের সুযোগ ঠিক এসে যেত। কোথাও মন্ত্রী, কোথাও সাংসদ, কোথাও বিধায়ক, কোথাও যুব নেতা। কিন্তু এবার সে গুড়েও বালি। নতুন একটা শব্দ হাজির হয়েছে। ভার্চুয়াল উদ্বোধন। মানে, কলকাতায় বলে কোচবিহার বা পুরুলিয়ার পুজোর উদ্বোধন করা যাবে। ব্যাস, আর যায় কোথায়! তিনি ঠিক করলেন, তিনিই বড় বড় পুজোগুলো উদ্বোধন করবেন। কোচবিহার থেকে পুরুলিয়া, ঝেঁটিয়ে উদ্বোধন করতে লাগলেন। সেগুলো আবার সরকারি অনুষ্ঠান। অর্থাৎ, পুজো উদ্বোধনটাও সরকারি তকমা পেয়ে গেল।
জেলার নেতাদের দুঃখ হওয়ারই কথা। এতদিন পুজো উদ্বোধনের শিঁকে ছিঁড়ত। এখন সেটাও আর ছিঁড়ছে না। সেখানেও ভাগ বসাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভুলভাল মন্ত্রের ফোয়ারা ছুটছে জেলার পুজোতেও।
কারখানার ফিতে কাটার কথা। সেখানে পুজোর ফিতে কেটেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। আস্ত একটা কারখানা ভন্ডুল করে যদি কেউ মিষ্টি বিলি করে, তাঁর পুজো উদ্বেধন ছাড়া আর উপায় কী!