ধনতেরাস তো কোনওকালেই বাঙালির উৎসব ছিল না

তমাল ভৌমিক

বছরখানেক আগেও ধনতেরাস উৎসবের কথা শুনেছিলেন?‌ পাতা জোড়া বিজ্ঞাপন দেখেছিলেন?‌ হিন্দি বলয়ের এই উৎসব কবে যেন বাংলার ড্রয়িংরুমে ঢুকে পড়েছে। টিভিতে ধনতেরাসের বিজ্ঞাপনের ছয়লাপ। কাগজে কাগজে পাতা জোড়া বিজ্ঞাপন। এসব ঢাউস বিজ্ঞাপনের ফল যে পাওয়া যাচ্ছে, তা তো গয়নার দোকানের ভিড় দেখলেই বোঝা যায়।

অনেকদিন আগে একটা কথা শুনেছিলাম, যার ভেতরে কোনও অলঙ্কার নেই, তাকে বাইরের অলঙ্কার দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখতে হয়। অর্থাৎ, আরও সহজ ভাষায় বললে, অলঙ্কার হল মূর্খের অবলম্বন। সে দামী গয়না পরেই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। এই রোগটি মহিলাদের একতরফা, এমন মনে করার কোনও কারণ নেই। অলঙ্কারধারী পুরুষেরও অভাব নেই। যত দিন যাচ্ছে, এই প্রবণতা বাড়ছে।

dahnteras1

টিভিতে সিরিয়ান মানেই যেন অলঙ্কারের বিজ্ঞাপন। রান্নাঘরে রান্না করছে, গা ভর্তি গয়না। ড্রয়িংরুমে কুটকচালি করছে। সেখানে গয়না। পাঁচ মহিলা দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছে, পাঁচজনের গায়েই দামী শাড়ি, পাঁচজনের পরণেই যেন বিয়েবাড়ির সাজ। সে ভোরের দৃশ্য হোক বা রাতের। সিনেমাতেও কায়দা করে পিসি চন্দ্র, অঞ্জলি জুয়েলার্স, বলরাম বসাক— এসব ঢুকে পড়ছে। কখনও দোকানের ছবিতে, কখনও নায়ক–‌নায়িকার সংলাপে। এভাবে বাঙালির অন্দরমহল না জেনে, না বুঝে গিলছে অলঙ্কারকে।
অনেকে রেগে যেতেই পারেন, কিন্তু আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যে যত অলঙ্কার পরে, তার কথায় বুদ্ধি–‌যুক্তির ছাপ তত কম। ভাবেন, গয়না পরলে বোধ হয় তাঁদের দারুণ সুন্দর লাগছে। পুরুষ বোধ হয় তাঁদের দিকে তাকিয়েই থাকবে। হ্যাঁ, গয়না দেখে তাকিয়ে থাকা পুরুষের অভাব নেই। স্থূল ও চটুল জিনিসের কদর করার লোক সবসময়ই বেশি।

dhanteras2

বাঙালি নবান্ন, পিঠে পরব ভুলতে বসেছে। আঁকড়ে ধরছে ধনতেরাসকে। হুজুগপ্রিয়তার এমন উর্বর জমি, কে না চাষ করতে চাইবে?‌ তাই গয়নার কোম্পানিগুলোও বাজার ধরতে লাফিয়ে পড়েছে। ধনতেরাস ধামাকার নামে আদেখলাপনাই বুঝিয়ে দেয় ‘‌এগিয়ে বাংলা’‌র ছবিটা আসলে কেমন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.