যারা কেন্দ্র চেনে না, তাদের সমীক্ষার কী মূল্য!‌

ওপেন ফোরাম

উত্তম জানা
অনেকেই নিজের নিজের মতো করে সমীক্ষা করছেন। অধিকাংশ সমীক্ষাতেই দেখানো হচ্ছে, তৃণমূল তিরিশের ওপর আসন পাচ্ছে। কোথাও বিজেপিকে ছটি, কোথাও আটটি আসন দেওয়া হচ্ছে। কংগ্রেস পাচ্ছে কোথাও দুটি, কোথাও চারটি আসন। বামেরা যথারীতি শূন্য।
অনেকেই বলছেন, এটা পেইড সমীক্ষা। টাকা দিয়ে এই সমীক্ষা করানো হয়েছে। না, এমনটা আমি মনে করি না। প্রশ্ন হল, কে টাকা দিচ্ছে?‌ তৃণমূল নিশ্চয় ৩০–‌৩২ আসন পাচ্ছি, এটা দেখাতে চাইবে না। বিজেপি–‌ও নিশ্চয় ৬–‌৮ আসন পাচ্ছি, এটা দেখাতে চাইবে না। সহজ কথা, তৃণমূল দেখাতে চাইবে, অন্তত ৪০ আসন আসছে। বিজেপিও দেখাতে চাইবে, ২০ আসন আসছে।
আসল কথা হল, এই সব সমীক্ষা করতে হলে যেভাবে বুঝতে হয়, যতটা রাজনীতি সচেতন হতে হয়, তা হয়ত এই সমীক্ষক দলের নেই। চায়ের দোকানের আড্ডা থেকে বা ফেসবুকে লাইকের সংখ্যা থেকে ভোটের সমীক্ষা হয় না। খবরের কাগজে কোন নেতাদের কত ছবি বের হল, তা দিয়েও হয় না। চ্যানেলে কাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়, কেন দেওয়া হয়, তা অনেকেই বোঝেন। আর কাগজে নাম তোলার জন্য কী কী উপাদান লাগে, তাও অনেকে বোঝেন।

vote8
একটা লোকসভা কেন্দ্রের আয়তন কতটা, সে সম্পর্কে অনেকের কোনও ধারণাই নেই। কোন কোন বিধানসভা নিয়ে সেই লোকসভা গঠিত, কোন বিধানসভার কী চরিত্র, সেদিকে কোনও আলোকপাত থাকে না। এমন অনেক উদাহরণ আছে, কেউ হয়ত পাঁচটা বা ছটা কেন্দ্রে এগিয়ে রইলেন। কিন্তু মাত্র একটি বিধানসভায় এতটাই পিছিয়ে গেলেন যে, তিনি হেরে গেলেন। অর্থাৎ, ছটা বিধানসভায় লিড পেয়েও লাভ হল না। আবার উল্টোটাও সত্যি, কেউ একটা মাত্র বিধানসভায় লিড পাওয়ার সুবাদে জিতে গেলেন। যাঁরা রাজনৈতিক তর্ক করেন, তাঁরা এসব বিষয়গুলো নিয়ে ভাবেন না। এমনকী যাঁরা সন্ধে হলেই টিভি আলো করে বসেন, সেই তথাকথিত বিশেষজ্ঞরাও বোঝেন না।
সাংবাদিকদের দৈন্যদশার কথা নাই বা লিখলাম। অধিকাংশ আলোচনা শুনে বা লেখা পড়েই বোঝা যায়, এঁরা দশ বছর আগের ঘটনাগুলোও ঠিকঠাক জানেন না। অনেকের রাজনৈতিক জ্ঞান শুরুই হয়েছে ২৫–‌৩০ বছর বয়সে। আচ্ছা বলুন তো, কলকাতার কজন সাংবাদিক পাঁচটা লোকসভা কেন্দ্রে বিন্যাস বলতে পারবেন?‌ হাতে গোনা একজন বা দুজন। বাকিরা দুটো লোকসভাও বলতে পারবেন কিনা সন্দেহ। হতেই পারে, সিপিএম একটা আসনও পেল না। কিন্তু এঁদের সমীক্ষা বা এঁদের বোকা বোকা বিশ্লেষণ শুনে ভোট বুঝতে হবে!‌
তৃণমূলের প্রতিপক্ষ বিজেপি, এরকম একটা হাওয়া অনেক দিন ধরেই তুলে ধরা হচ্ছে। এর পেছনে সবসময় যে বিশেষ উদ্দেশ্য আছে, তা নয়। আসলে, অজ্ঞতার জন্যই এরকম একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। মিলিয়ে নেবেন, অন্তত তিরিশ আসনে বামেরাই দ্বিতীয় হবে। বিজেপি বড়জোর দশ–‌বারোটি জায়গায় লড়াই করতে পারবে। কাগজে যতটা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে, বাস্তবটা মোটেই তেমন নয়। আর তৃণমূল!‌ ঠিকঠাক ভোট হলে ৩৫ শতাংশ ভোট পাওয়াও কঠিন। অর্থাৎ, ৬৫ শতাংশ ভোট বিরুদ্ধে। সেটা কোথায় কীভাবে ভাগ হবে, তার ওপর আসনের ফয়সালা নির্ভর করবে। তবে, বামেরা যদি দশটি বা তার বেশি আসন পেয়ে যায়, আমি অন্তত অবাক হব না।

 
(‌ওপেন ফোরাম। বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় বিভাগ। এটি হল পাঠকের মুক্ত মঞ্চ। যে কেউ নিজের ভাবনা মেলে ধরতে পারেন। লেখা নির্বাচিত হলেই প্রকাশিত হবে। মতামতের দায় সম্পূর্ণই লেখকের। আপনিও নানা বিষয়ে আপনার সুচিন্তিত মতামত পাঠাতে পারেন। )‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.