উত্তম জানা
সভা কার, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। বিজেপির সভা হলে তারা সফল করতে চাইবে, সেটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু গত কয়েকমাসে দেখা গেল, বিজেপির সভা সফল করতে তাদের যত না মাথাব্যথা, তার থেকে বেশি দায়িত্ব যেন তৃণমূলের। অনুমতি নিয়ে টালবাহানা করছে। কখনও বলছে হেলিকপ্টার নামতে দেব না। কখনও বলছে, পরেরদিন আরও বড় সভা করব। এইভাবেই অক্সিজেন জুগিয়ে চলেছে রাজ্যের শাসকদল।
অনেকে বলেন, সেটিং। আমি অবশ্য তেমনটা মনে করি না। সেটিং করে ঝগড়া হয় না। অঙ্কটা পরিষ্কার, তৃণমূল বিরোধী ভোট যতটা বেশি সম্ভব ভাগ করতে হবে। তা যেন একদিকে হেলে না পড়ে। বাম ও বিজেপি দুপক্ষই যদি কুড়ি শতাংশের ওপর পায়, তবেই তৃণমূলের লাভ। কোনও একটি দল যদি দশ শতাংশের নিচে নেমে যায়, স্বাভাবিক নিয়মেই অন্যদল তিরিশ শতাংশ বা তার বেশি পেয়ে যাবে। মিডিয়া বিজেপিকে নিয়ে যতই হইচই করুক, যতই হাওয়া তোলা হোক, সেই হাওয়া আবার ভ্যানিস হতে সময় লাগবে না। ২০১৪ তে যে বিজেপি এই রাজ্যে ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, তার পরের এক বছর কোথাও কোথাও সেটা প্রায় ২৫ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ তে আবার তা দশ শতাংশে নেমে আসে। সহজ কথা, সেবার তৃণমূল বিরোধী ভোটাররা বাম–কংগ্রেস জেটের ওপর আস্থা রেখেছিল। কারণ, তাঁদের মনে হয়েছিল, বিজেপি নেতৃত্ব মমতার সঙ্গে লড়াইয়ে আন্তরিক নয়। সিবিআই নামক রাষ্ট্রযন্ত্রটি ততদিনে শীতঘুম দিয়েছে।
সহজ কথা, বিজেপিকে এই রাজ্যে প্রাসঙ্গিক থাকতে হলে শুধু মন্দির–গরু–রথ এসব হাওয়া গরম করলে চলবে না। পাশাপাশি, তৃণমূল বিরোধী ইমেজটাও ধরে রাখতে হবে। সেটা অমিত শাহদের ফাঁপা হুঙ্কার দিয়ে হবে না। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মাঝে মাঝেই অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে সিবিআই–কে চালনা করা হচ্ছে। একেবারেই খাঁটি কথা। বিজেপির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলেই সিবিআই শীতঘুমে আছে। দিলীপ ঘোষরা যতই লড়াই করুন, দিল্লির নেতারা যে মমতাকে চটাতে চান না, এটা নিচুতলার প্রায় সবাই বুঝে গেছেন। তাই যাঁরা সত্যিকারের তৃণমূল বিরোধী, তাঁরা আস্তে আস্তে বুঝছেন কাদের ওপর ভরসা রাখা যায়।
ঠিক এমন সময়, ৩ ফেব্রুয়ারি দুটি সভা করবেন যোগী আদিত্যনাথ। অনেকদিন ধরেই যোগী যোগী চলছে।এই রাজ্যে প্রথমবার এলে মিডিয়ার দৃষ্টি থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। একদিকে বামেদের ব্রিগেড, অন্যদিকে যোগীর সভা। ব্যাস, মিডিয়ার সামনে ব্রিগেডকে লঘু করে দেখানোর আরও একটা সুযোগ এসেই গেল। সেদিন ব্রিগেডের বদলে যোগীর ছবি বড় করে ছাপলে দিদিমণি নিশ্চয় রাগ করবেন না। একদিকে যোগীর ভাষণ, অন্যদিকে তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া। ব্যাস, এই নিয়েই প্রথম পাতার আইটেম হয়ে গেল। এমনকী টিভির সান্ধ্যকালীন আসরেও যোগী–ব্রিগেড দিব্যি মিলেমিশে যাবে। বোঝানোর চেষ্টা হবে, ব্রিগেডের মিটিং আসলে তেমন কিছুই নয়। অবশ্য এসব ভুলভাল তত্ত্বে বিশ্বাস করার মতো লোকের অভাব নেই। বামেরা শেষ, দূরবিন দিয়ে খুঁজতে হবে, এসব তো কতদিন ধরে শুনে আসছি। আসলে, দিদিমণি জানেন, লড়াইটা কার সঙ্গে। তাই যেভাবেই হোক, বিরোধী ভোটকে ভাগ করতে হবে। যেভাবেই হোক, বিজেপি লড়াইয়ে আছে, এটা বোঝাতে হবে। নকল যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা করে অক্সিজেন জোগাতে হবে।
মমতা যতই বিজেপিকে গালমন্দ করুন। মনে মনে নিশ্চয় কৃতজ্ঞ। ঠিক তেমনি, রাজ্য বিজেপি যতই মমতার সমালোচনা করুক, তাঁরাও বোধ হয় মনে মনে দিদিমণির কাছে কৃতজ্ঞ। সরকারের কাছ থেকে এমন অক্সিজেন তারা কোনও রাজ্যেই পায়নি।