বিনয়াক বন্দ্যোপাধ্যায়
লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ। খুব ছোট বেলা থেকেই শুনে এসেছি। ইন্দিরা গান্ধীর সময় টিভি আসেনি। এলেও তা শহরেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে রাজীব গান্ধীর সময় থেকে স্পষ্ট মনে পড়ে। তিনি কোন দলের, সেসব নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, এটাই সবথেকে বড় পরিচয়।
তারপর ভিপি সিংকে পেয়েছি। নরসীমা রাওয়ের বক্তৃতা শুনেছি। দেবগৌড়ার ভাষণ ভাল লাগেনি। ভাল লেগেছে বাজপেয়ীকে। মনমোহন কিছুটা যেন ম্যাড়মেড়ে। মন ছুঁয়ে যাক বা না যাক, তাঁদের প্রধানমন্ত্রী ভাবতে কোনওদিন দ্বিধা হয়নি। কিন্তু মোদির এই ভাষণকে কেন জানি না, মেনে নিতে পারছি না।
কোনও সন্দেহ নেই, মোদি যথেষ্ট ভাল বক্তা। কিন্তু কেন জানি না, বারবার মনে হয়, কোথায় কোনটা বলতে হয়, কোথায় কোনটা বলতে নেই, সেই বোধটা বোধ হয় ততখানি প্রখর নয়। যেগুলো জনসভায় বলার কথা, সেগুলো লালকেল্লায় বলে ফেলেন। পার্লামেন্টে বলতে গিয়েও নিজের মর্যাদা অহেতুক হারিয়ে ফেলেন। এমন এমন কথা বলেন, যা একজন প্রধানমন্ত্রীর কাছে কখনই কাম্য নয়।
লালকেল্লাতেও তেমনটাই হল। সারাক্ষণ নিজের ঢাক পিটিয়ে গেলেন। এমন ঢাক পেটানো, যে শালীনতার সীমাটুকুও রাখলেন। তাঁর আগের প্রধানমন্ত্রীরা প্রায় সবাই অপদার্থ, একমাত্র তিনিই যেন দেবদূর হয়ে মর্ত্যে নেমে এসেছেন। তাঁর আগে সরকার বলে কিছুই ছিল না। ২০১৪–র পর থেকেই যেন সরকার চলছে। কোনওরকম কোনও সৌজন্যের ধার ধারলেন না। সামনের সারিতেই বসে আছেন মনমোহন সিং, দেবগৌড়ার মতো প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীরা। অথচ, লালকেল্লা থেকে তিনি প্রায় রাজনৈতিক ঢঙেই ভাষণ দিয়ে গেলেন। গলা চড়িয়ে, নামিয়ে, একেবারে সস্তা দরের নাটক করে গেলেন।
এটা অন্যদের আক্রমণের জায়গা নয়। এটা বিরোধীদের সমালোচনা করার মুহূর্ত নয়। এই সহজ শিক্ষাটাই এখনও আয়ত্ব করতে পারেননি। এর আগেও তো অনেক প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দিয়েছেন। অন্য দলের প্রধানমন্ত্রীদের কথা ছেড়ে দিন, নিজের দলের অটল বিহারী বাজপেয়ীর ভাষণ শুনুন। তাহলেই তফাতটা বুঝতে পারবেন।
না, এই ভাষণ কখনই প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ নয়।

