রজত সেনগুপ্ত
অল্পেই হাল ছেড়ে দেওয়া আমাদের স্বভাব। দু পা এগিয়েই আমরা চার পা পিছিয়ে যাই। ভেবে নিই, আর বোধ হয় কিছু হল না। অকারণ পণ্ডশ্রম করে লাভ কী? এভাবেই আমাদের কত ছোট ছোট লড়াই যে অপূর্ণ থেকে যায়!
ইমরান খান অন্তত দেখিয়ে দিলেন, লড়াই করে গেলে, একসময় না একসময় সাফল্য আসে। যদি সাফল্য নাও আসে, তবু লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে পালাতে নেই। পাকিস্তানের রাজনীতি নিয়ে কোনওকালেই আমার তেমন আগ্রহ নেই। ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেটের অনুরাগী। তাই ইমরানের প্রতি একটা আলাদা শ্রদ্ধা আছে। সেই ইমরান যখন রাজনীতিতে এলেন, শুরুর দিকে ঠিক মানতে পারিনি। মনে হয়েছিল, ইমরানও শেষপর্যন্ত ক্ষমতার মোহে রাজনীতিতে এলেন! ২২ বছর আগে, প্রথম নির্বাচনে একেবারেই ধরাশায়ী হয়েছিলেন। যতদূর মনে পড়ছে, ছটি আসনে দাঁড়িয়ে ছটিতেই হেরেছিলেন। তাঁর দলও কোনও আসনেই জিততে পারেনি। মনে হয়েছিল, একদিক দিয়ে ভালই হল। ইমরানের অন্তত মোহভঙ্গ হয়েছে। আর বোধ হয় এ পথে পা মাড়াবেন না।
কিন্তু তিনি অন্য ধাতুতে গড়া। তাই, কোনও সাফল্য নেই, তাও লড়ে গেলেন। একের পর এক নির্বাচনে কার্যত ধরাশায়ী হলেন। তবু হাল ছাড়েননি। এতদিনে এসে সাফল্য পেলেন। ভেবে দেখুন, ২২ বছরের নিরন্তর সংগ্রাম। বিশ্বজয়ী অধিনায়কের কীই বা নতুন করে পাওয়ার ছিল। পাকিস্তানকে যে সম্মান এনে দিয়েছেন, বিতর্ক থেকে দূরে থাকলে এমনিতেই সবাই মাথায় করে রাখতেন। অনায়াসে লন্ডনে বা দুবাইয়ে বসে বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু পাকিস্তানের রুক্ষ মাটিতেই পড়ে থেকেছেন। ব্যক্তিগত জীবনেও নানা ঘাত–প্রতিঘাত এসেছে। কাছের মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তিনি একাই নিজের লড়াই লড়ে গেছেন।
তাই আজ তাঁর সাফল্যে কেন জানি না একটা অন্য অনুভূতি ছুঁয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, সত্যিকারের লড়াই করলে একদিন হয়ত সুফল পাওয়া যায়। এই হার না মানা মানসিকতার নামই ইমরান। প্রশাসক হিসেবে তিনি সফল হবেন নাকি ব্যর্থ হবেন, জানি না। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কোন খাতে বইবে, তাও জানি না। কতটা সেনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবেন, বলা মুশকিল। কেন জানি না, মন বলছে, বাকিদের থেকে তিনি আলাদা, এমন একটা ছাপ বিদায়বেলায় ঠিক রেখে যাবেন।