সরল বিশ্বাস
দেশ পত্রিকা নতুন আঙ্গিকে। অন্য জগতের সেলিব্রিটিদের ঢাউস ছবি নয়। লেখকরাই এখন সেলিব্রিটি। শুরু হয়েছিল জয় গোস্বামী–সুবোধ সরকারের জুটি দিয়ে। পরের দফায় শ্রীজাত ও বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার কবিতা থেকে গদ্যে। এই সময়ের দুই জনপ্রিয় সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত ও স্মরণজিৎ চক্রবর্তী।
কয়েকদিন ধরেই কাগজে বিজ্ঞাপন বেরোচ্ছিল। পড়ার অপেক্ষাতেই ছিলাম। এক নিশ্বাসে পড়ে ফেললাম। বলা যায়, বেশ সমৃদ্ধই হলাম। স্মরণজিতের লেখা খুব একটা পড়া হয়নি। তবে প্রচেত গুপ্তর অনেক লেখাই পড়েছি। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, বেশ ভালই লাগে।
দুই লেখকের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। উঠে এল কত অজানা দিক। দেশ পত্রিকাগোষ্ঠীকে আলাদা করে ধন্যবাদ জানাতেই হবে। একটি বিষয় জেনে খুব ভাল লাগল, দুজনের কেউই সোশাল মিডিয়ায় নেই। তাঁরা নিজেদের লেখা নিজেরা প্রচারও করেন না। নিজেদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তিও দিতে হয় না। তবু মানুষ তাঁদের বই কেনেন। সোশাল মিডিয়ার আনুকূল্য ছাড়াও সাহিত্যিক হিসেবে একটা জায়গা তৈরি করেছেন। আত্মপ্রচারসর্বস্ব সময়ে এটা সত্যিই একটা ব্যতিক্রমী ব্যাপার। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তাঁদের লেখালেখির ক্যানভাসটা অনেকটাই ধরা পড়েছে। নিছক সাক্ষাৎকার নিতে বসে যাওয়া নয়, পর্যাপ্ত রিসার্চওয়ার্ক ছিল বলেই মনে হয়েছে।
তবে, পাঠক হিসেবে একটা আক্ষেপও থেকে গেল। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে পাঠক একজন লেখককেও খুঁজতে চায়। যেমন, স্মরণজিৎ কী করেন, অন্য কোনও পেশার সঙ্গে যুক্ত নাকি লেখালেখিই জীবিকা, তা জানা গেল না। হাতে লেখেন না কম্পিউটারে লেখেন, ভোরে উঠে লেখেন নাকি লিখতে লিখতে রাত ভোর হয়ে আসে, স্পষ্ট হল না। এঁরা কি চিঠি লেখেন? হাতে লেখা মুগ্ধতার চিঠি পান? আধুনিক সময়ের প্রকাশকদের সম্পর্কে এঁদের মনোভাব কী? ডিজিটাল সাহিত্যকে নতুন প্রজন্মের দুই লেখক কী চোখে দেখছেন? সিনেমা বা সিরিয়ালে চিত্রনাট্য লেখার আবদার আসে? এগুলি অজানাই থেকে গেল।এমনকী রাজনৈতিক বিশ্বাসের জায়গাটাও না–ছোঁয়াই থেকে গেল। প্রচেত গুপ্তর বেশি কিছু গল্প বা উপন্যাস নিয়ে সিনেমা হয়েছে। সেগুলির উল্লেখ থাকলে ভাল হত। লেখক হয়ত ঢাক পিটিয়ে নিজের কথা বলবেন না। কিন্তু পাঠকের স্বার্থে সেগুলো বের করে আনা তো সঞ্চালকের কাজ।
তবু বলব, সংখ্যাটি অসাধারণ। সাহিত্যরসিক মানুষেরা অবশ্যই পড়তে পারেন। এই প্রজন্মের লেখকদের তুলে ধরা নিঃসন্দেহে ভাল উদ্যোগ। কিন্তু পাশাপাশি সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব গুহ, সমরেশ মজুমদাররা এখনও বেঁচে আছেন। অনেকেই লেখালেখিতে বেশ সক্রিয়। তাঁদের নিয়ে কভার স্টোরি হতে পারে না? পাঠক হিসেবে অপেক্ষায় থাকলাম।