অভিরূপ কুমার
একটু অবসর পেলেই সেখানে চলে যেতেন উত্তম কুমার। জায়গাটা এতটাই ভাল লেগে গেল, সেখানে জমিই কিনে ফেললেন।
কোথায় বলুন তো ?
ঠিক ধরেছেন, তোপচাঁচি। মধ্যবিত্ত বাঙালির পশ্চিম বলতে যে কটা জায়গা বোঝায়, তার একটা অবশ্যই তোপচাঁচি। চাইলে এই শীতে ঘুরে আসতেই পারেন।
এখন ট্যুর অপারেটরদের পাল্লায় পড়ে বাঙালি অনেক দূরে দূরে যেতে শিখেছে। কথায় কথায় কাশ্মীর, রাজস্থান, আন্দামান ছুটছে। কেউ কেউ তো ইউরোপ, আমেরিকা ট্যুর করে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু ঘরের কাছে এই প্রিয় জায়গাগুলো যেন মানচিত্রের বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
অথচ, কয়েক দশক আগেও ছবিটা এমন ছিল না। বাঙালি একটু অবসর পেলেই ছুটত শিমুলতলা, মধুপুর, গিরিডি, তোপচাঁচি, হাজারিবাগ। হাওয়া বদল বা পশ্চিমে যাওয়া বলতে এগুলোকেই বুঝত।
হারানো সুর নিশ্চয় দেখেছেন ? কানে কানে শুধু একবার বলো, তুমি যে আমার –গীতা দত্তর গাওয়া সেই গানটা মনে পড়ছে। হ্যাঁ, এই তোপচাঁচিতেই তার শুটিং হয়েছিল। শুধু হারানো সুর নয়, বিপাশা, হসপিটাল- এই সব ছবির শুটিংও হয়েছে আশেপাশেই।
শুরু অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে। তার আগে উত্তম কুমারকে বলা হত ফ্লপ মাস্টার। অগ্নিপরীক্ষা থেকেই যেন চাকা ঘুরতে লাগল। তোপচাঁচিকেও মনে ধরে গেল মহানায়কের। একটু ফুরসত পেলেই চলে আসতেন পাহাড়ঘেরা এই লেকের ধারে। একসময় তো ঠিক করে ফেললেন, এখানে একটা ফিল্ম সিটি তৈরি করবেন। ১৫ একর জমিও কেনা হল। কিন্তু শেষমেষ তা বস্তবায়িত হয়নি।
কীভাবে যাবেন ? মোটেই খুব কঠিন নয়। নিজস্ব গাড়ি থাকলে আলাদা কথা। নইলে আগে ট্রেনে ধানবাদ চলে আসুন। সেখান থেকে গাড়িতে বড়জোর একঘণ্টা। খরচ বাঁচাতে চাইলে পাবলিক ট্রান্সপোর্টেও যেতে পারেন। থাকার জায়গাও আছে। আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভাল। সরকারি, বেসরকারি দুরকম ব্যবস্থাই আছে।
পরেশনাথ পাহাড়ের গায়ে প্রায় ২ কিমি জায়গাজুড়ে তৈরি হয়েছে এই লেক। শোনা যায়, ঝরিয়ায় জল সাপ্লাইয়ের জন্যই এই লেক তৈরি হয়েছিল। পরেশনাথ পাহাড়ের জল নেমে আসত সেই লেকে। একদিকে লেকের নীল জল, আর সবুজ পাহাড়। সবমিলিয়ে দারুণ এক ক্যানভাস। লেকের ধারে বসার জন্য বেঞ্চিও আছে। শীতের অলস দুপুর দারুণভাবে কাটতে পারে এই লেকের ধারে। সন্ধে নামার মুহূর্তটা তো অসাধারণ।
আরও একটি অসাধারণ গানের দৃশ্যায়ণ হয়েছিল এই লেকে। যাঁরা সুচিত্রা সেন-অশোক কুমারের ‘হসপিটাল’ ছবিটি দেখেছেন, তাঁদের আর ভাবতে হবে না। ‘এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়/ একি বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু’।
মনে মনে সেই গানের দৃশ্যে ফিরে যান। চাইলে গুনগুন করে গেয়েও উঠতে পারেন। তাহলে পুজোর আগেই বেরিয়ে পড়ুন। দু-তিনটে দিন পাহাড় আর লেকের দেশ থেকে ঘুরে আসুন।