সেলফি:‌ একা ভাবার সঙ্গী?‌ না কি নতুন সমাজের পত্তন ?‌

অম্লান রায়চৌধুরি

বর্তমান যুগে সেলফি একটি নতুন এবং জনপ্রিয় শব্দ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমাদের সামাজিক জীবনে এই শব্দটির ব্যবহার দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।আমরাও যেন সেলফির জগতে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেলফির ব্যবহার সেদিকেই ইঙ্গিত করে। এর জন্য ভবিষ্যতের ইতিহাসবিদরা আমাদের ‘নার্সিজম যুগ’ বা ‘আত্মপ্রেমের যুগ’র মানুষ বললেও অত্যুক্তি হবে না মনে হয়।
কিন্তু নিজের প্রতিকৃতি নিয়ে মানুষের এই বাড়াবাড়ি কিন্তু আজ নতুন কিছু নয়। আগের দিনেও মানুষ নিজের প্রতিকৃতি নিয়ে মেতেছে বহুভাবে। আর এক্ষেত্রে বিশ্বখ্যাত ওলন্দাজ চিত্রশিল্পী রেমব্রান্টকে এ ধারার পথিকৃত বলা যেতে পারে, হয়তো বলা যেতে পারে তিনিই সেলফির জনক।
কেননা, মাত্র ৬৩ বছরের জীবনে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় ৮০টির মতো আত্মপ্রতিকৃতি এঁকেছিলেন এ বিখ্যাত চিত্রশিল্পী! বিবিসি অবলম্বনে এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো রেমব্রান্ট ও সেলফির যোগসূত্রের কথা।
মোবাইলে নিজের ছবি তুলে তা ফেসবুকে আপলোড করছেন? আপনি একা নন। এ রকম ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে আপলোড করেন অনেকেই। মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা থেকে শুরু করে পোপ ফ্রান্সিস কিংবা মহাকাশচারী আকাই হোসাদি, হলিউড কিংবদন্তি মেরিল স্ট্রিপেরও এ ইতিহাস রয়েছে। নিজের ছবি তোলা ও তা শেয়ার করার এ প্রবণতা যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘সেলফি’। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ব্যবহারের কল্যাণে অনেকের হয়তো এই শব্দটির সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে।
‘সেলফি’–নিজের প্রতিকৃতির ইংরেজি । এটি এ বছর অক্সফোর্ড অভিধানের বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। অভিধানটির সম্পাদকদের বরাতে এক খবরে বিবিসি জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও নিজের ছবি তোলার ক্ষেত্রে যে ইংরেজি শব্দ ব্যবহৃত হয় তা থেকেই ‘সেলফি’ শব্দটির উৎপত্তি।

selfie3
অক্সফোর্ড অভিধানের সম্পাদকদের তথ্য অনুযায়ী, ২০০২ সালে একটি অনলাইন ফোরাম প্রথম সেলফি শব্দটি ব্যবহার করেছিল। ভারতীয় ছবি-বিষয়ক পরামর্শক নিধি শর্মার মতে, নিজের জীবনের অংশবিশেষ বস্তুনিষ্ঠ করে তুলতে আমরা ভার্চুয়াল বন্ধুদের সঙ্গে নিজের তোলা ছবি শেয়ার না করা পর্যন্ত এ অভিজ্ঞতা যেন পূরণ হয় না।
এক দশক আগে সেলফি শব্দটির উৎপত্তি হলেও কেবল গত বছর এর ব্যবহার বাড়তে শুরু করে। নিজের তোলা ছবি ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের পোস্ট করা বাড়তে শুরু করার সেলফি ও হ্যাসট্যাগ অনলাইনে ব্যাপক জনপ্রিয় শব্দ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। অক্সফোর্ড অভিধানের সম্পাদকেরা জানিয়েছেন, কেবল ২০১২ সালেই ইংরেজি ভাষায় এ শব্দের ব্যবহার বেড়েছে ১৭ হাজার শতাংশেরও বেশি।
সেলফি প্রজন্মের উত্থান বর্তমান প্রজন্মের অনেক তরুণ-তরুণীকে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ব্যবহারে নিমগ্ন থাকতে দেখা যায়। ডিজিটাল ক্যামেরা, স্মার্টফোনে নিজের ছবি তুলে তা ফেসবুক, টুইটারে শেয়ার করে অন্যের মতামত পেতে আগ্রহী এই প্রজন্ম। গবেষকেরা এ প্রজন্মকে বলছেন ‘সেলফি’ প্রজন্ম। এ প্রজন্ম প্রযুক্তি ও নিজেকে নিয়ে ভাবতেই অভ্যস্ত। ভারচুয়াল জগতে বন্ধু তৈরি করে এই প্রজন্ম নিজেকে একাকী করে তুলছে বলেও ভারতের প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা মনে করেন।
জানা যায় মার্কিন আলোকচিত্রী রবার্ট কর্নেলিয়াস ১৮৩৯ সালে নিজের ছবি নিজে তুলে পৃথিবীর প্রথম সেলফি তৈরি করেন। কিন্তু এ যুগে সেলফি বলতে যা বোঝায় সেই ‘সেলফি’ শব্দটি অস্ট্রেলিয়ার একটি অনলাইন ফোরাম সর্বপ্রথম ব্যবহার করে ২০০২ সালে। এরপর থেকে বিষয়টির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে-স্থান পায় অক্সফোর্ড অভিধানে এবং ২০১৩ সালে বর্ষসেরা শব্দের খেতাবও অর্জন করে ‘সেলফি’।
ভারতের মনস্তত্ত্ব বিশেষজ্ঞ অঞ্জলি সাবরি বলেন, এখনকার প্রজন্মের তরুণরা ভারচুয়াল জগতে নিজেদের মনের মতো একটি জগৎ গড়ে তুলছে আর এই জগতে অধিকাংশ সময় সেলফি পোস্ট দিচ্ছে। সেলফি দিয়ে তার মনের ভুল ছবিটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে চাইছে তরুণরা। ছবি-বিষয়ক পরামর্শক সিনা আগরওয়াল জানিয়েছেন, আমরা যে অস্তিত্বশীল এটা জানান দেওয়ার জন্যই অনেক আমরা ছবি শেয়ার করি এবং আমরা যাদের কোনোদিন দেখিনি তাদের কাছে প্রশংসা কুড়িয়ে মানসিক শান্তি পাই। এভাবে অন্যকে খুশি করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় কাছের বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারছি না। এ ছাড়াও সেলফি পোস্ট করার উদ্দেশ্য থাকে বেশি করে মন্তব্য ও লাইক পাওয়া। কিন’ ছবি পোস্ট করার পর আশানুরূপ সাড়া না পেলে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন।
আমার আমিত্ত্ব কে যাচাই করবার নবতম সংস্করণ হল ‘সেলফি’ চিরকালই মানুষের নিজেকে নিয়ে বড় চিন্তা। কী করে বড় হবো , দেশের হব , দশের হব , তাই মন দিয়ে পড়াশুনো করব , ভালো রেজাল্ট করব , ভালো চাকরি করব , — এই যে এত কিছু করার ইচ্ছাটা এখন কেমন যেন বাড়তে বাড়তে আশেপাশের সামাজিক খুঁটিগুলোকে যেন দুমড়ে মুচরে দিচ্ছে – দলতে চাইছে ।
এরকমটা ছিলোনা । আমাদের ছোটো বেলায় মাঠে শীতকালে যখন বার্ষিক স্পোর্টস হত – দৌড় , লংজাম্প, হাই জাম্প, — ইত্যাদি – আমাদের অংশগ্রহনটা বাধ্যতামূলক সে যে ছেলেটা বেদম মোটা , হাঁটতে পারেনা সে ও যেমন ছুটবে আবার এমনই রোগা যে হাওয়ায় মিলিয়ে যায় সেও ছুটবে । ফলাফল জানা থাকতো , যে অমুক দাদা ১০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হবে , কি অমুক দাদা – লং জাম্পে প্রথম হবে । কোনো ভাবনা নেই এই নিয়ে – না আছে কোনো সমালোচনা , ছিলো কিছু নির্ভেজাল বিনোদন যেখানে সবাই মিলে মিশে খানিক্ষুন কাটান । এগুলো ছিলো মেনে নেওয়া নিজের ক্ষমতাকে যাচাই করে সামাজিক সংঘবদ্ধতার চাদরে । ওটা ঢাকা থাকতো । খোলা হতোনা । চলত এবং চলনশীল বলে চলে যেত এটাও সত্যি ছিলো ।
আজ এভাবে চলেনা কেন যদি ভাবি বেশ অবাকই হই – আবার অনেকটাই যুক্তিযুক্ত বলেও মনে হয় ।
যৌথ পরিবারের সমাপ্তি প্রায় দু দশকের উপর হয়ে গেছে । নিউক্লিয়াস পরিবারটাও এখন কেবল বুড়ো – বুড়ীর আস্তানায় গিয়ে ঠেকেছে । ছানা পোনাদের খবর হয় হোয়াটস অ্যাপে – না হয় স্কাইপেতে আসা অস্পষ্ট কাঁপা কাঁপা কিছু ছবি – কথায় — সাক্ষাত হওয়ার সুযোগ খুব কমই হয় ।
আজকের সমাজে নিজের এই ছবিটা যেন বেশী করে আঁকরে ধরে নিজের আমিত্ত্ব কে । এই প্রজন্মে বেরে উঠল যারা বুঝতেই পারলোনা যে ভাগ বাটোয়ারা করে আম চুরি করে নুন মাখিয়ে খেতে কি মজা , কাজেই ভাবনাটা আসবে কোথা থেকে । স্কুলে টিফিন ভাগ করে খাওয়ার আনন্দটা আসতেই দেয়না , কারন স্কুল ছুটির পরেই মায়ের প্রশ্ন , টিফিনটা সব খেয়েছো তো , কোনো সময়েই মেয়ে টাকে ভাবতে শেখায় না যে তারও কিছু সহপাঠি আছে সকলেই তার মতন উচ্চবিত্ত পরিবারের নয় , তাদের টিফিনেও কিছু তফাত মেয়েটা দেখে – সে টা মেয়েটাকে বুঝতে সাহায্য করেনা –বুঝতে শেখায়না – কাজেই মনে জাগেনা – এই সামাজিক অসম বন্ধনটার জন্য ।
এরা বড় হচ্ছে এই ভাবে । আমার এক বন্ধুর কথা মনে পড়ল – একই সাথে হোষ্টেলে থাকতাম । হঠাৎ রাতের বেলায় নিজের আন্ডারোয়ারটা খুঁজে পাচ্ছিনা । ছেড়ে দিলাম খোঁজা । বেশী রাতে বন্ধুটা এলো দেখি আমার আন্ডারোয়ার টা পরে আছে । কোনো কথা না বলে খুলে রাখতে গিয়ে বলল , আমারটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না , তাই তোরটা পরে গেলাম । আজ নাকি ওর প্রেমিকার সাথে প্রথম অ্যাপয়ন্টমেন্ট । একটু ঝগড়া, তারপরে সব শেষ – একসাথেই খেতে চললাম খাবার ঘরে । এরকম যে আমিও করিনি তাও নয়।
এই যে নিজের মধ্যে অনেক রকমের সামাজিক বা পারিপার্শিক নির্ভরশীলতাকে যাপন করে বেড়ে ওঠাটা ছিলো সেই সময়ের গীতা – শিখতে হয়নি , নিজেদের প্রয়োজনটাকে ভাঙ্গতে শিখেছি , ভাগ করতে শিখেছি , তাই সহজ ভাবে শেখা হয়ে গেছে — জানিনা কবে , কি ভাবে ।
এই ভাবে বেড়ে ওঠার মন্ত্রটা কোনো দিনই নিজেকে একলা ভাবতে শেখাতোনা । নিজেকে দেখার প্রশ্ন তো আসতোইনা । অন্যের উপর ভরসা করে নিজের সাজগোজও যেন আয়নার সাহায্যের প্রয়োজন হতোনা ।
আজ এই প্রজন্ম পারছে না সেই ভরসা রাখতে , কারন তারা ভরসার পথটা দিয়ে চলতে শেখেনি জীবনের প্রথম দিন থেকেই । দেখেনি তাদের বুনট , সমাজের বাঁধন , তাই বড় একা আজ তারা । তাই নিজেকে নিজের দেখার এক অদম্য ইচ্ছা। নিজের নানান রুপ থেকে নিজেকে নিজের চেনার যে আর কোনো পথ নেই। তাতেও যদি সংশয় আসে, সাথে নিয়ে নেয় কাউকে যে বা যারা আজকালকার সেলিব্রেটি — তখন দেখতে চেষ্টা করে ইমপ্যাক্টটা ঠিক কী , আমার নিজের প্রতিবিম্বটা কতটা গ্রহন যোগ্য করে তুলতে পারি আমার কাছে – গোটা সমাজের কাছে – এটা কে নিশ্চিত করতে চাই ।

selfie2
গত বছরের এপ্রিলে সাইকোলজি টুডে-তে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে মনোবিশ্লেষক ড. পামেলা রূটলেজ সেলফির কারণে মানুষের আত্মবিশ্বাস কমে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন। তিনি মনে করেন, বেশি বেশি সেলফি পোস্ট যারা করে তারা মূলত একাকী ও তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস কম। আত্মপ্রেম বা নার্সিসিজমের সঙ্গেও সেলফির যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করেছেন গবেষকেরা। কোনো কোনো গবেষকের মতে, নার্সিসিস্টিক ব্যক্তিত্বের সমস্যার সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত সেলফি তোলার সম্পর্ক রয়েছে। এ ধরনের ব্যক্তিত্বের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন তাঁরা নিজের গুরুত্ব, ক্ষমতা, সৌন্দর্য নিয়ে সব সময় আচ্ছন্ন থাকেন ও সেগুলোকে লালন ও প্রচার করতে আগ্রহী হন। এই বিবেচনায় এঁরা মাত্রাতিরিক্ত সেলফি ব্যবহার করতে পারেন বলে ধারণা করা হয়। সেলফির কারণে অনেক সময় ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হতে পারে, এটি প্রতিরোধে পারস্পরিক বোঝাপড়াটা জরুরি।
২০১৩ সালে প্রকাশিত ‘সাইকোলজি অব সেলফিজ’ নিবন্ধে গবেষক ক্রিস্টি বারলেট বলেন, যারা বেশি বেশি সেলফি তোলে ও পোস্ট করে তাদের বেশির ভাগের মধ্যেই রয়েছে অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা এবং তারা কেউ কেউ ব্যক্তিজীবনে অনেকখানিই একা।
সমপ্রতি নিজের ছবি তোলা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার গবেষকেরা একটি গবেষণা করেছিলেন। এ গবেষণায় দেখা যায়, সেলফি পোস্ট করার পেছনে মানুষের যতখানি না লোক দেখানোর বিষয় থাকে তার চেয়ে বেশি ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ ও নিজের সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকে। ছুটির দিন ও সামাজিক কোনো কর্মকাণ্ড উপলক্ষে মানুষ বেশি নিজের ছবি তুলে রাখে। গবেষকেরা বলেন, নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পেতে সেলফি পোস্ট করেন। আমি কে বা আমি কী করি তা জানাতেই অনেকেই পোস্ট করেন নিজের ছবি।এমনো দেখা যায় এই আমাদের দেশেও যে কোনো ঘটানার সাথে নিজেকে জুড়ে দেওয়া – সেখানে ঘটনাটা গুরুত্ত্ব পেল কি পেলনা – কিছু যায় আসেনা , নিজের ছবিটাকে মেলে ধরার চেষ্টা , একটা চটুল মোড়কে – আবার সেই নিজেকে দেখা , সত্যি আমি আজ বড় একা — ।
এটাই যে শেষ নয় তার জন্যই কিছু পজিটিভ সাইডকেও দেখতে হবে সেলফির মাধ্যমে – যেটা নিয়ে দুচার কথা বলার প্রয়োজন আছে ।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, নিজেকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে অন্যের কাছে তুলে ধরাটা নান্দনিক আর এতে কোনো সমস্যা নেই। নানা অনলাইন মাধ্যমের বিশিষ্ট গবেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে সেলফির পক্ষে বেশ কয়েকটি যুক্তি প্রকাশ করা হয়। যেমন নিজেকে অন্যের কাছে তুলে ধরা যায়, আবার অন্যেরা আপনাকে কেমন ভাবছে তাও সেলফির মাধ্যমে জানা যায়। সামাজিকভাবে সম্পৃক্ত হতে সাহায্য করে সেলফি। উদাহারণ হিসেবে জাপানি শিশুদের একাকিত্ব ও বিভিন্ন অ্যানিমেটেড খেলা ছেড়ে সমাজে সম্পৃক্ত হতে সেলফি কীভাবে সাহায্য করেছে তা বিবৃত করা হয়। নিজেকে একজন মানুষ যতটুকু মনে করে সে যে তার চাইতে আরও বেশি বড় তা সেলফির মাধ্যমে প্রমাণ হতে পারে, হতে পারে দ্রুত যোগাযোগের বিকল্প। ‘আমার এই পোশাকটি কেমন’ সঙ্গে সঙ্গে সে অনেকের মতামত পেয়ে যায়, অন্যের কাছে স্বীকৃতি পাওয়ার মাধ্যমে সে তার চাহিদার সোপানের একধাপ ওপরে উঠে যেতে পারে, মনোবল বেড়ে যায়, সাজানো-গোছানো ফরমায়েশি ছবির চেয়ে সেলফি অনেক বেশি বাস্তবসম্মত ও প্রাকৃতিক। এতে প্রকৃত মানুষটিকে চেনা যায়, পর্যায়ক্রমিক সেলফির মাধ্যমে একজন মানুষের রুচি ও মানসিকতার পরিবর্তনও অনুসরণ করা যায়।
অনেক সময় সেলফি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় চলন্ত গাড়িতে সেলফি তোলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গে জেনিয়া নামের এক তরুণী এ বছরের এপ্রিল মাসে তার ১৮তম জন্মদিনে একটি রেলব্রিজের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
সেলফি নিয়ে থাকতে পারে বিতর্ক। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের বিপ্লবের এই যুগে সেলফিকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সেলফি তুলুন, পরিমিতভাবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.