কী আশায় বাঁধি খেলাঘর। আসলে শ্যামল মিত্রর গান। কীভাবে কিশোর কুমারের গান হয়ে গেল? দেয়া নেয়া ছবিতে শ্যামল মিত্র কেনই বা প্রোডিউসার হয়েছিলেন? এমন অনেক অজানা কথা সৈকত মিত্রর স্মৃতিচারণে।
শুধুমাত্র কয়েকটা ভাল গান একটা ছবির চেহারা বদলে দিতে পারে। ছবিটা হয়ত অনেকের মনে নেই। কিন্তু গানগুলো বেঁচে আছে। বাংলা বা হিন্দিতে এমন অনেক উদাহরণ আছে। হয়ত সব ভাষাতেই আছে।
আবার উল্টো উদাহরণও আছে। ভাল গান, কিন্তু সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি। সেই গানই যখন বিখ্যাত অভিনেতার লিপে ব্যবহার হয়েছে, গানটা অনেক বেশি পরিচিতি পেয়েছে।
আমার বাবার কথাই ধরা যাক। যেগুলো উত্তম কুমার গেয়েছেন, সেগুলো অনেকেই মনে রেখেছেন। যখনই অনুষ্ঠানে যাই, এইসব গানের অনুরোধ বেশি আসে। তার মানে কি অন্য গানগুলো খারাপ? মোটেই না। আসল তফাত হল, সেগুলো উত্তম কুমারের লিপে ছিল না, আর যেগুলো মুখে মুখে ফেরে, সেগুলো উত্তম কুমারের লিপে।
দেয়া নেয়া ছবির কথা অনেকেই জানেন। অসাধারণ একটা ছবি। কিন্তু অনেকেই জানেন না, ছবিটা আমার বাবা প্রযোজনা করেছিলেন। এমন নয় যে আমার বাবা পেশাদার প্রোডিউসার। এমন নয় যে বাবার অনেক টাকা ছিল। তবু বাবা চূড়ান্ত একটা ঝুঁকি নিয়েছিলেন। কেন জানেন? শুধুমাত্র উত্তম কুমারের লিপে গান গাইবেন বলে।
সেই সময় সব গায়কই চাইতেন, সিনেমায় মহানায়কের লিপে তাঁর গান থাকুক। কিন্তু সেই সময়ে উত্তম কুমারের সঙ্গে বাবার গলাটা ঠিক মিলছিল না। মহানায়কের লিপে সেভাবে গান গাওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তখন তিনি ঠিক করলেন, দেয়া নেয়া ছবিটা প্রোডিউস করবেন। মস্তবড় একটা ঝুঁকি নিলেন। তিনিই সঙ্গীত পরিচালক, তিনিই গায়ক। গানগুলো শুধু মনে করুন। আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারাদিন, জীবন খাতার প্রতি পাতায়, গানে ভুবন ভরিয়ে দেব। গানগুলি সত্যিই অমরত্ব পেয়েছিল।
আরও একটি গানের কথা বলি। কী আশায় বাঁধি খেলাঘর। অনেকেই জানেন, এটা কিশোর কুমারের গান। তার বছর দশেক আগে এটা বাবা আকাশবাণীর লাইভ অনুষ্ঠানে গেয়েছিলেন। যে কোনও কারণেই হোক, তখন গানটা জনপ্রিয়তা পায়নি। গানটা বাবারই সুর দেওয়া। অমানুষ ছবির ওই সিকোয়েন্সে বেশ কয়েকটা গান পরিচালক শক্তি সামন্তকে শোনানো হয়েছিল। কোনওটাই তাঁর ঠিক পছন্দ হয়নি। কী আশায় বাঁধি খেলাঘর যখন শোনানো হল, সবার খুব পছন্দ হয়ে গেল। গানটা কিশোর কুমার রেকর্ড করলেন। সুপার হিট হয়ে গেল। যে গান বাবার কণ্ঠে মানুষের কাছে পৌঁছল না, সেই গান কিশোরের কণ্ঠে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। কিশোর কুমারের অবদানকে এতটুকুও ছোট করছি না। কিন্তু এক্ষেত্রেও একটা বড় কারণ উত্তম কুমার। তিনি লিপ না দিলে হয়ত গানটা এতখানি হিট নাও হতে পারত।
এইভাবে অনেক গায়কের সাফল্যের পেছনেও থেকে গেছেন ওই মানুষটি। সবাই তাঁর অভিনয় নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু বাংলা গানকেও তিনি অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। এমন অনেক গানকে তিনি নতুন করে প্রাণ দিয়েছিলেন।
(সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন)