বছরের শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পেল ময়ূরাক্ষী। সেই ছবি মুক্তির পরই বেঙ্গল টাইমসে বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। তেমনই একটি লেখা ফের তুলে আনা হল।
জ্যোতির্ময় রায়
অনেকদিন পর দারুণ একটা ছবি দেখলাম। এ ছবিতে কোনও ছকে বাঁধা গল্প নেই। ভিন দেশে বা ভিনরাজ্যে আউটডোর লোকেশান নেই। মারকাটারি কোনও সংলাপ নেই। কিন্তু যা আছে, তা অনুভবের।
বয়সকালের নিঃসঙ্গতা একটা মানুষকে কোথায় পৌঁছে দেয়। একজন মানুষ কীভাবে ধীরে ধীরে বিস্মৃতির দিকে এগিয়ে যান। চারপাশের এই খবরের হইচই কখন বিরক্তিকর লাগে। টিভির মধ্যে দিয়ে চোরাস্রোতের মতো কীভাবে ঢুকে পড়ছে অসহিষ্ণুতা। বলার মতো অনেক কথা জমে আছে, অথচ বলার মতো সঙ্গী নেই। রোজকার নিয়মেই সকাল থেকে সন্ধে, সন্ধে থেকে গভীর রাত নেমে আসে।
এই নিঃসঙ্গতা, এই অসহায়তাকে চিত্রনাট্যে চমৎকার তুলে ধরেছেন পরিচালক অতনু ঘোষ। আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়! কী অসাধারণ অভিনয়টাই না করলেন। আর কেউ এমনটা পারতেন কিনা জানি না। হ্যাঁ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে এমন অনেক ছবিতেই অভিনয় করতে হয়েছে, যেগুলো হয় না করলেও পারতেন। কিন্তু যাঁরা অভিনয়ের কদর বোঝেন, এই ছবিটা না দেখলে আক্ষেপ থেকে যাবে। বয়সকালের নিঃসঙ্গতাকে কী চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। চিত্রনাট্যের পরেও অনেক না বলা কথা থেকে যায়। প্রতিটি শরীরী ভাষায়, আলো আঁধারিতে অভিনেতাকেই সেই ছবিটা আঁকতে হয়।
মাঝে মাঝে ভাবলে অবাক হই। এমন সব দিকপাল পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন। অথচ, সেসব ছবির জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার পাননি। পেয়েছেন এমন একটি ছবির জন্য, যেটা সৌমিত্রবাবু নিজেই প্রথম পঞ্চাশের মধ্যে রাখবেন কিনা সন্দেহ। সেই ছবির নামও অধিকাংশ বাঙালিই জানেন না। জানি না, কীভাবে এইসব পুরস্কার দেওয়া হয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই ছবি যদি জুরি বোর্ডের সামনে দেখানো হয়, ঠিকঠাক মূল্যায়ন হলেও হতে পারে। হ্যাঁ, এই ছবির জন্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্যই জাতীয় পুরস্কার পাওয়া উচিত।
আশি পেরিয়ে এসেও তিনি সুস্থ, সতেজ। স্মৃতিতে এতটুকুও মরচে পড়েনি। প্রতিটি ছোট ছোট ঘটনা, অনুভূতি যেন এখনও জীবন্ত। এই বয়সে এসেও শুধু অভিনয় করে যাচ্ছেন, তাই নয়। প্রাণ ঢেলে অভিনয় করছেন। প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করছেন। বয়স হলেই মানুষ ফুরিয়ে যায় না, তাঁর আরও অনেক কিছু দেওয়ার থাকে। সৌমিত্রবাবু যেন সেটাই বারবার বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন।