সুবাস ঘিসিংয়ের নামে একটি রাস্তা। কিন্তু সেই রাস্তার আড়ালে কত মুখ বদলে গেল! কত বয়ান বদলে গেল! বিনয় তামাং, মমতা ব্যানার্জি, মন ঘিসিং – সবাই কেমন নিজের নিজের অঙ্ক বুঝে নিলেন! কার কী অঙ্ক? তাই নিয়েই লিখেছেন রক্তিম মিত্র।।
রোহিণীর রাস্তা এবার সুবাস ঘিসিংয়ের নামে। সরকারিভাবে নাম হয়ে গেল সুবাস ঘিসিং মার্গ। ঘটা করে অনুষ্ঠানও হল। বিনয় তামাং বললেন, উনি আমার রাজনৈতিক গুরু। আজ তাঁকে সম্মান জানাতে তাঁর নামে রাস্তা করা হল। মুখ্যমন্ত্রীও অনেক ভাল ভাল কথা বললেন। আর ঘিসিং–পুত্র মন ঘিসিং। আপাতত তিনিও সরকারের প্রশংসাই করে চলেছেন।
এই ঘিসিংকে কে পাহাড়–ছাড়া করেছিল? এখন সবাই সব দোষ বিমল গুরুংয়ের নামে চাপিয়ে দেবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিনয় তামাংরা সেদিন কী করছিলেন? যেদিন ঘিসিংয়ে প্রয়াত স্ত্রীর মরদেহও পাহাড়ে অন্ত্যেষ্টির জন্য আনতে দেওয়া হয়নি, মাঝপথ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেদিন বিনয় তামাং কী করছিলেন? কই, সেদিন তো কোনও প্রতিবাদ শোনা যায়নি। সেদিন বিমল গুরুংয়ের সব অপকর্মকেই সমর্থন করেছেন। আজ দয়া করে তাঁর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজে পার পাওয়ার চেষ্টা করবেন না। আজ ঘিসিংকে গুরু বলছেন। অথচ, ঘিসিংকে পাহাড়–ছাড়া করার আপনিও একজন। জিটিএ–তে আপনি। ঘিসিং পুত্রকেও তো শান্ত করতে হবে। ব্যাস, বাবার নামে একখানা রাস্তা। সঙ্গে টুকটাক উপঢৌকন। আপনি আপাতত নিষ্কন্টক।
বাম জমানা থেকেই ঘিসিং পাহাড় ছাড়া। ধরে নিন সেটা বাম প্রশাসনের ব্যর্থতা। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও ঘিসিং পাহাড় ছাড়া। তাঁকে জলপাইগুড়ির ভাড়া বাড়িতেই থাকতে হয়েছে। দিনের পর দিন এমন অবস্থার পরেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে পাহাড়ে ফেরানোর কোনও ব্যবস্থাই করতে পারেননি। তখন বিমল গুরুং তাঁর নতুন বন্ধু। গুরুংকে খুশি রাখতে গেলে যে ঘিসিংকে পাহাড়–ছাড়া থাকতেই হবে। এমনকী ঘিসিংয়ের স্ত্রীর মরদেহ যখন মাঝরাস্তা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হল, সেদিনও মুখ্যমন্ত্রী নিরবই ছিলেন। কোনও মৌখিক প্রতিবাদও দেখা যায়নি। আজ ঘটা করে নামকরণ করে শ্রদ্ধা দেখানো? শ্রদ্ধার যে নমুনা দেখিয়েছেন, আজকের এই শ্রদ্ধাটা বড়ই মেকি মনে হচ্ছে।
ঘিসিং পুত্র মন ঘিসিং। যারা আপনার বাবাকে পাহাড় ছাড়া করেছিল, ঘরে ফিরতে দেয়নি, আজ তারাই উৎসব করছে। আর ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারায় আজ আপনিও সামিল। জিটিএ–র ক্ষমতা গেছে বিনয় তামাং–অনীত থাপাদের হাতে। আপনার গোঁসা হওয়া স্বাভাবিক। আপনাকেও কিছু একটা ক্ষমতার ভাগ দিতে হবে। দু–একদিন মৃদু সুর চড়ালেন। আপনাকে বাগে আনতে গড়া হয়ে গেল হিল ডেভলপমেন্ট কাউন্সিল। তার কাজ কী, কেউ জানে না। একটা জিটিএ থাকার পর আলাদা কাউন্সিল? তার এক্তিয়ার কী, কে কার নির্দেশে চলবে, কোনও কিছুই স্পষ্ট নয়। যেটা স্পষ্ট, সেটা হল আপনার সামনেও ক্ষমতা আর উপার্যনের একটা ললিপপ ঝুলিয়ে দেওয়া হল। আর আপনি সেটা গ্রহণ করলেন। বাবার নামে রাস্তা দেখে আপনি বিগলিত হয়ে গেলেন। আর প্রতিবাদ করা সম্ভব নয়। আপনার প্রতিবাদকে কিনে নেওয়া হল। কিছুটা আর্থিক টোপ দিয়ে, আর কিছুটা বাবার স্মৃতিতে সুড়সুড়ি দিয়ে।
একটি রাস্তা। তিনজনকে চিনিয়ে দিয়ে গেল। সুবাস ঘিসিং, এই তিনজনকে দেখে আপনার করুণা হচ্ছে না!