অণু গল্প:‌ আলুপোস্ত

অণুগল্প

আলুপোস্ত

শর্মিলা চন্দ

মা আলুপোস্ত একটা টিফিন কৌটোতে পুরে বিন্দিকে দিয়ে বলল, দাদুর বাড়ি দিয়ে আয়। বিন্দি জানে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। মা তাকে জোর করে পাঠাবেই। কৌটোটা হাতে করে সে বেরুল।

বিন্দির কিছুতেই আসতে ইচ্ছে করে না মায়ের এই দূরসম্পর্কের কাকার বাড়িতে। এ পাড়ায় নতুন ভাড়া এসেছে দাদু। তার বৌ, ছেলে মরে গেছে। মাঝে মাঝে মা টাকা পয়সা ধার–‌টার পায় দাদুর থেকে। ভালমন্দ রান্না হলে মা পাঠাবেই দাদুকে। তার বাবা বেঁচে থাকলে বিন্দিকে আসতে হত না এ বাড়িতে। বাবা তার সব কথা বুঝত। মা কিছুতেই বুঝতে চায় না।তার বাবাটা যে কেন দুদিনের জ্বরে মরে গেল!

alu posto

দাদু, দাদু বলে দরজার কাছে এসে ডাকল সে। দরজা খোলাই ছিল। তবুও বিন্দি ভিতরে যায় না। একদিন না ডেকে ঘরে ঢুকে পড়েছিল সে। দাদু টিভিতে কীসব খারাপ খারাপ সিনেমা দেখছিল। সে যেতেই তার শরীরটা যেন চোখ দিয়ে খাচ্ছিল দাদু। বিন্দি ওড়নাটা ভাল করে জড়িয়ে নিল গায়ে।

দাদু বেরিয়ে আসতে তার হাতে কৌটোটা দিল বিন্দি। দাদু বলল ভিতরে আয়। কৌটোটা ফেরত নিয়ে যা। দাদু তরকারিটা একটা বাটিতে ঢালতে ঢালতে একটুখানি মুখে দিয়েই থু থু করে ফেলে দিল।

‘দাদু,তুমি আলুপোস্ত খাও না!’
‘আর কোনওদিন এসব আনবি না আমার জন্যে’। বলেই দাদু টিফিন কৌটোটা বিন্দির হাতে দিয়ে পাশের ঘরে চলে গেল।
দাদু কাঁদছে। টেবিলে রাখা একটা ছবিতে হাত বোলাচ্ছে। বিন্দি কাছে এসে দাঁড়ালো। দাদু বলছে, আমি খাইনি রে, আলুপোস্ত খাইনি। তুই খাস না কতদিন, আমি কী করে খাই বল?

ছবির ওই ছেলেটা কী দাদুটার ছেলে! আজকে কেন যেন দাদুটার মুখটা তার বাবার মতো লাগছে। তার বাবা তার মাথায় এভাবেই হাত বুলিয়ে দিত। বিন্দি হাতটা বাড়িয়ে দাদুর মাথায় ছোঁয়ালো। মাঝে মাঝে যেমন তার বাবাকে দিত। তার আজ একটুও ভয় করল না।

(বেঙ্গল টাইমসে জমজমাট অণু গল্পের আসর। বিন্দুতেই সিন্ধুর স্পর্শ। চাইলে, আপনিও অণু গল্প লিখতে পারেন। পাঠিয়ে দিন বেঙ্গল টাইমসের ঠিকানায়।
ঠিকানা:‌ bengaltimes.in@gmail.com)

book-banner-strip

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.