চিত্রকর:‌ মনের ক্যানভাসে আঁকা ছবি

সংহিতা বারুই

চোখে দেখাই শেষ কথা নয়। শিল্পীর থাকে এক অন্তর্দৃষ্টি। মনের আলোয় তিনি দেখতে পান। মনের ক্যানভাসে তুলির আঁচড় কাটেন।
একজন অন্ধ শিল্পীর জীবনের নানা ঘাত–‌প্রতিঘাত নিয়ে তৈরি ছবি চিত্রকর। খুব বড় বাজেটের ছবি নয়। বড়সড় তারকার দরকার হয়নি। এমনকী শুটিংয়ের জন্য ভিনদেশ তো দূরের কথা, ভিন রাজ্যেও যেতে হয়নি।

chitrakar
বহুকাল আগে শিল্পী বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। নাম ছিল ইনার আই। একজন অন্ধ শিল্পী কীভাবে শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে শিল্প নির্মাণ করেন, সেটাই ছিল ছবির বিষয়। এখানে পরিচালক শৈবাল মিত্র সেই পথই ধরেছেন। তিনিও তাঁর ক্যানভাসে আঁকতে চেয়েছেন সেই বিনোদবিহারীকেই।
বেছে নিয়েছেন খোয়াই নদীকে। যেখানে রোজ সূর্যোদয় অনুভব করতে যান শিল্পী। সঙ্গী গ্রামের স্টেশন মাস্টার। সেই শিল্পীর কাছেই পাঠানো হয় আর্ট কলেজ থেকে পাস করা এক শিল্পীকে। নাম তিথি (‌অর্পিতা পাল)‌। তাঁর কাজ, শিল্পীকে সাহায্য করা। শিল্পের নির্দেশ মেনে কাজ করা। কাগজ থেকে কাঁচের ম্যুরাল তৈরি হবে। তা জায়গা পাবে কলকাতার এক রেস্তোরাঁয়। নির্মাণ করতে গিয়েই নতুনের সঙ্গে পুরানোর সেই চিরাচরিত দ্বন্দ্ব। দুই ভিন্ন প্রজন্মের শিল্পী, তাদের দুই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। মতান্তর এসেছে, মনান্তরও এসেছে। কিন্তু তা শিল্পের হাত ধরেই।

chitrakar2

এমন কিছু সংলাপ উঠে এসেছে, ছবির জগতের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত না থাকলে যা উঠে আসার কথা নয়। রঙ–‌তুলির জগৎকে দারুণভাবেই সেলুলয়েডে তুলে আনলেন পরিচালক। ভোরের খোয়াই সত্যিই অনবদ্য। আলতো আলোর রেশা এসে পড়ছে শিল্পীর গায়ে। তিনি অনুভব করতে পারছেন সূর্যের কোমল স্পর্শ। আকাশে রোদের মতোই মুখে খেলে যায় আলতো হাসি। এই চরিত্র দৃতিমান চট্টোপাধ্যায় ছাড়া আর কাউকে মানাতো বলে মনে হয় না। কাস্টিং থেকে চিত্রনাট্য, লোকেশান থেকে আবহ— সব ব্যাপারেই দারুণ ছাপ ফেলল চিত্রকর। জানি না, কতদিন চলবে। এমন ছবি সচরাচর বক্স অফিসের আনুকূল্য পায় না। হয়ত এটাও দু সপ্তাহ পর উঠে যাবে। আর দশটা ছবির মতোই হারিয়ে যাবে। তবু যাঁরা শিল্পমাধ্যমকে ভালবাসেন, যাঁরা একটু হলেও ভাল ছবির সন্ধানে থাকেন, তাঁরা এই ছবি অবশ্যই দেখুন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.