যাক, হাইজ্যাক অন্তত হল না

বিদায়বেলায় প্রিয়রঞ্জন হাইজ্যাক হয়ে যেতেই পারতেন। শিলিগুড়ির বৈঠক সেরে হয়ত একটা কপ্টার উড়ে আসত রায়গঞ্জে। সবকিছুই হত বিশেষ কারও ‘‌অনুপ্রেরণা’‌য়। রাজ্যে মেরুদণ্ডের বড় অভাব। অন্তত দীপার তা আছে। সেটা আবার বোঝা গেল। লিখেছেন রক্তিম মিত্র।।

যাক, একটা দেহ অন্তত হাইজ্যাক হতে হতে বেঁচে গেল। সৌজন্যে দীপা দাশমুন্সি। এবং হয়ত অধীর চৌধুরি।
শেষদিকে প্রিয়রঞ্জনের জীবনে সবচেয়ে বড় স্বপ্ন কী ছিল?‌ নিঃসন্দেহে রায়গঞ্জে এইমস নির্মাণ। প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের অনুমোদন হয়ে গিয়েছিল। টাকা বা জমি, কোনওটাই সমস্যা হত না। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং চেয়েছিলেন রায়গঞ্জেই এইমস হোক। কিন্তু তা হয়নি। শুধু অসহযোগিতা নয়, যতটা বাধা দেওয়া সম্ভব, দেওয়া হয়েছে। কে বা কারা দিয়েছে, সেটা না বললেও চলবে।

dipa dasmunsi
কিন্তু তারপরেও দেহ হাইজ্যাক হতেই পারত। হয়ত দিল্লিতেই কাউকে পাঠিয়ে দেওয়া হত। কলকাতায় কোথায় কোথায় দেহ যাবে, কোথায় দাহ হত, সবই অন্য কারও অনুপ্রেরণায় ঠিক হত। হয় সরকারি আমলারা, নয়ত সেই জেলার তৃণমূল নেতারা সবকিছু পরিচালনা করতেন। সুচিত্রা সেনের শেষকৃত্যে যদি শঙ্কু পণ্ডা নিরাপত্তা বলয়ের ভেতরে থাকতে পারেন, তাহলে প্রিয়রঞ্জনের ক্ষেত্রে তা কোথায় যেত, কে জানে!‌ সেইদিন শিলিগুড়িতে ছিল পাহাড়ের সর্বদল বৈঠক। নিশ্চিত থাকুন, প্রিয়রঞ্জনের স্ত্রীর নাম যদি দীপা দাশমুন্সি না হত, সেই পাহাড় বৈঠক বাতিল হয়ে যেত। একটা হেলিকপ্টার কলকাতা থেকে এসেছে। আরেকটা হেলিকপ্টার শিলিগুড়ি থেকে নিশ্চিত আসত। তাঁর অনুপ্রেরণায় হত গান স্যালুট। ছবিজুড়ে বিরাজ করতেন তিনি। প্রিয়র মহিমার থেকেও তাঁর উদারতা, সৌজন্য— এসব বেশি করে প্রচার হত।
অনেকেই এসেছিলেন। ফুল দিয়েছেন। সবার সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেছেন দীপা। সৌজন্য দেখিয়েছে মিছিলও। একসময়ের সঙ্গী সুব্রত মুখার্জিকে সেই হেলিকপ্টারে নিয়ে যেতেও কুণ্ঠা করেননি। কিন্তু ‘‌তিনি’‌ এলে!‌ এক্ষেত্রেও দীপা হয়ত সৌজন্য দেখাতেন। কিন্তু ওইটুকুই। তার বেশি কিছু হয়ত হত না। সেটা বুঝতে পেরেই হয়ত ঝটিকা উড়ানে রায়গঞ্জ অভিযান হল না।
এমনিতেই এই রাজ্যে মেরুদণ্ডের বড় অভাব। রাজ্য–‌অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য নিজেদের বিকিয়ে দেওয়ার সুন্দর একটা প্রতিযোগিতা চলছে। সেই আবহে, কেউ কেউ তো ব্যতিক্রমী আছেন। সেই তালিকায় দীপার নামটা স্বচ্ছন্দেই লেখা যায়।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *