বিজেপিতে গেলেও মোহভঙ্গ হতে সময় লাগবে না

অধীর চোধুরিকে খোলা চিঠি
সরল বিশ্বাস
বাজারে জোর গুঞ্জন, আপনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। কয়েকমাস আগে থেকেই শুরু হয়েছে। রোজ একটু একটু করে বাড়ছে। একের পর এক ঘটনা পরম্পরা যেন সেই গুজবকে উস্কে দিচ্ছে।
দীপালির পরেই আর আপনি হয়ত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থাকবেন না। আপনার জায়গায় প্রদীপ ভট্টাচার্যকে আনার সিদ্ধান্ত নাকি পাকা। কেন প্রদীপ ভট্টাচার্যকে আনা হচ্ছে, তা সবাই বোঝে। মমতার কাছে জোটের বার্তা দেওয়া। মমতার আপত্তি ছিল না বলেই প্রদীপ ভট্টাচার্য ফের রাজ্যসভায় গেলেন। মমতার আপত্তি নেই, তাই প্রদীপ ফের সভাপতিও হবেন।

adhir2
সবই হচ্ছে দিদিমণিকে তুষ্ট রাখার জন্য। আপনি থাকলে জোট হওয়া মুশকিল। মমতাও রাজি হবেন না। অতএব, অধীরকে সরাও। প্রদীপের আলো ফিরিয়ে আনো। আপনার তাহলে কী হবে?‌ শোনা যাচ্ছে, এ আই সি সি–‌তে পুনর্বাসন দেওয়া হবে। নামে প্রমোশন, আসলে সরিয়ে দেওয়া। হয়ত ছত্তিশগড় বা মেঘালয়ের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হবে। তাতে কী এল গেল?‌ মুর্শিদাবাদ বা বাংলাতেই যদি চুটিয়ে রাজনীতি করতে না পারেন, ভিনরাজ্যে করে কী হবে?‌ যেমন রাহুল সিনহার এখন কী কাজ, কেউ জানে না।
এই অবস্থায় কী করবেন?‌ বিজেপিতে যাওয়া ছাড়া উপায়ই বা কী?‌ সেখানেও নানা সমস্যা। লোকসভা ভোট এখনও দেড় বছর। এখন পদত্যাগ করলে উপনির্বাচন। নতুন প্রতীকে জিতে আসা সহজ হবে না। উপনির্বাচনে শাসক দল কতটা মরিয়া থাকবে, আপনার থেকে ভাল কে জানে!‌ আপনাকে হারাতে আদাজল খেয়েই নামবেন দিদিমণি। প্রশাসনকে কতটা নোঙরাভাবে ব্যবহার করা হবে, বেশ ভালই জানেন। আর একবার উপনির্বাচনে হেরে গেলে, আর ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। ফলে, চাইলেও এখনই যাওয়া হচ্ছে না। অন্তত একটা বছর অপেক্ষা করতেই হবে।
কিন্তু সেখানেও কি খুব শান্তিতে থাকতে পারবেন?‌ দিলীপ ঘোষদের হুকুম মেনে চলতে পারবেন?‌ মুর্শিদাবাদে হয়ত তাঁরা তেমন নাক গলাবেন না। কিন্তু সেখানেও খুচরো অশান্তি লেগেই থাকবে। ধরা যাক, মুকুল রায় এলেন। আপনার জেলায় তাঁর অনুগামীও কম নেই। তাঁদের পুনর্বাসন দিতে চাইবেন। দিল্লি নেতাদের কাছেও তিনিই হয়ত বেশি গুরুত্ব পাবেন। আজ না হলেও আগামীদিনে সংঘাত অনিবার্য। তাছাড়া, বিজেপিতে গিয়ে কি মমতা বিরোধী আন্দোলন করতে পারবেন ?‌ রাশ টেনে ধরা হবে না তো?‌
আপনার কি সত্যিই মনে হয় বিজেপি মমতার বিরুদ্ধে আন্তরিকভাবে লড়াই করতে চায়?‌ তাহলে সারাদা তদন্ত তিন বছর ধরে ঝিমিয়ে আছে কেন?‌ যেটা সাতদিনে করে ফেলা সম্ভব, সেটা তিন বছর লাগছে কেন?‌ ওপর তলার নির্দেশ ছাড়া এমনটা হতে পারে?‌ রাজ্য সরকারের একের পর এক অনিয়ম, কেন্দ্র কার্যত নীরব হয়ে আছে কেন?‌ একটা সামান্য বিবৃতি দেওয়ার সাহসটুকুও দেখাতে পারছেন না রাজনাথ সিং, অরুণ জেটলিরা। দিলীপ ঘোষরা যতই হম্বিতম্বি করুন, দিল্লির নেতারা ভালই জানেন, মমতাকে চটিয়ে লাভ নেই। আগামীদিনে বিজেপির আসন যদি কমে যায়, মমতাই বড় ভরসা হয়ে দেখা দিতে পারেন। সেই দিনের দরজা খুলে রাখতেই হবে। ধরা যাক, সরকার গড়তে ফের মমতার সমর্থন দরকার হল। তখন?‌ তাই মোদিবাবুরাও দিদিমণির বিরুদ্ধে একটা স্তর পর্যন্ত যাবেন, তারপর থেমে যাবেন। এই সহজ সত্যিটা ভাল করে বুঝে নিন।
এখন মমতা ঠিক করে দিচ্ছেন কংগ্রেসের সভাপতি কে হবেন। এমন একদিন আসবে যেদিন হয়ত মমতা ঠিক করে দেবেন বিজেপির সভাপতি কে হবেন। অতীতে এমনটা হয়েওছিল। শুধুমাত্র মমতা ব্যানার্জি চাননি বলে তের মাসের এনডিএ সরকারে তপন শিকদার মন্ত্রী হতে পারেননি। আবার সেই দিন আসবে না, কে বলতে পারে?‌ কী জানি, তখন আপনাদের হয়ত আবার কংগ্রেসে ফিরতে হতে পারে। রাজনীতি সত্যিই বড় বিচিত্র বস্তু। কখন কোন জল কোথায় গড়িয়ে যায়, কেউ জানে না। তাই সেইদিনের জন্যও প্রস্তুত থাকবেন।

(‌বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় বিভাগ— খোলা চিঠি। সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নানা জগতের দিকপালদের খোলা চিঠি লেখা যায়। আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা:‌ bengaltimes.in@gmail.com )‌‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.