দোহাই, এবার আর কারাতকে দায়ী করবেন না

স্বরূপ গোস্বামী

বাংলার বাম মহলে এখন সবচেয়ে সমালোচিত লোকটির নাম কী?‌ বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রকাশ কারাত। কেন তিনি সীতারাম ইয়েচুরিকে রাজ্যসভায় যেতে দিলেন না, তা নিয়ে সোশাল মিডিয়া তোলপাড়। এমনকী বাম নেতারা প্রকাশ্যেই মুখ খুলছেন কারাতের বিরুদ্ধে। বেঙ্গল টাইমসের বিভিন্ন প্রতিবেদনেও বেশ কয়েকবার কারাতবাবুর তীব্র সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু এই লেখা কারাতবাবুদের উদ্দেশ্যে নয়। দিশাহীন বঙ্গীয় বাম নেতৃত্বের বিরুদ্ধে।

prakash karat 5 big

সীতারাম ইয়েচুরি যে ছাড়পত্র পাবেন না, সেটা অন্তত দু–‌তিন মাস আগে থেকেই পরিষ্কার ছিল। যাঁদের সামান্যতম রাজনৈতিক দূরদর্শিতা আছে, তাঁরা সবাই জানতেন। সিপিএম নেতৃত্ব জানতেন না, এটা তো হতে পারে না। তাহলে আগে থেকে বিকল্প (‌প্ল্যান বি)‌ ভেবে রাখা হল না কেন? ইয়েচুরির বদলে অন্য কেউ প্রার্থী হলে হয়ত কংগ্রেস সমর্থন করত না। আবার সরাসরি কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থন করা সিপিএমের পক্ষেও সমস্যা। এর মাঝামাঝি একটা রাস্তা তো বেরিয়ে আসতে পারত। দুই পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য, এমন নিরপেক্ষ মুখ তো হাজির করা যেত। কং শিবিরকে তো প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারত, আসুন, এমন একজনকে খুঁজে বের করি, যাঁকে নিয়ে কারও কোনও আপত্তি থাকবে না। এই বাংলায় এমন মুখের তো অভাব ছিল না। আই পি এস নজরুল ইসলাম হতে পারতেন উপযুক্ত বিকল্প। প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গাঙ্গুলির কথাও ভাবা যেতে পারত। যাঁরা শাসকের তাঁবেদারি করেননি, যাঁরা যথেষ্ট সমাজ সচেতন, যাঁদের সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে তেমন প্রশ্ন নেই। দলীয় রাজনীতির লোকেরা তো অনেকবার রাজ্যসভায় গেছেন। না হয় এবার সক্রিয় রাজনীতির বাইরের কেউ যেতেন। জেতার সম্ভাবনা নিশ্চিত জানলে অনেকে রাজিও হতেন। অধীর চৌধুরি বা আব্দুল মান্নানরা যে প্রদীপ ভট্টাচার্যকে রাজ্যসভায় পাঠাতে খুব আগ্রহী ছিলেন, এমনও নয়। কিন্তু বামেদের গড়িমসিতেই তাঁরা প্রদীপ ভট্টাচার্যের নামে সায় দিলেন। এর জন্য অন্তত কংগ্রেস নেতৃত্বকে দায়ী করে লাভ নেই। তাঁরা যথেষ্ট সময় দিয়েছেন, বামেদের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করেছেন। সীতারাম ইয়েচুরিকে প্রার্থী করার ব্যাপারে বাংলার বামেদের যত না আগ্রহ ছিল, তার থেকেও বেশি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন কং নেতৃত্ব। এরপরেও যদি ইতিবাচক কোনও প্রস্তাব যেত, হয়ত কং নেতৃত্ব বিবেচনা করতেন। কিন্তু বামেরা এবারও সিদ্ধান্ত নিতে অযথা অনেক দেরি করে ফেললেন। মনোনয়নের শেষদিন প্রার্থী ঘোষণা হল। যে মনোনয়ন জমা পড়ল, তা নিয়েও নানা বিতর্ক। বাতিল হতে পারে, এমনটাই শোনা যাচ্ছে।

rahul, yechuri

মনে পড়ছে আশির দশক–‌নব্বইয়ের দশকের কথা। পঞ্চায়েতে কোন বুথে কে প্রার্থী হতে পারেন, প্রায় ৬–‌৭ মাস আগে থেকে ভাবা থাকত। একান্তই রামবাবু রাজি না থাকলে বিকল্প হিসেবে শ্যামবাবুর নামও ভাবা থাকত। আর এখন!‌ রাজ্যসভায় কে যাবেন, তাও সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে মনোনয়নের শেষ দিনে। বিকল্প প্রার্থী দাঁড় করানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে মনোনয়নের ঠিক আগের দিনে। ততক্ষণে প্রদীপ ভট্টাচার্য মনোনয়ন জমা দিয়ে ফেলেছেন।

সহজ একটা ব্যাপারকে আবার অহেতুক জটিল করা হল। ইয়েচুরিকে ছাড়পত্র না দেওয়ার জন্য কারাতদের সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু বিকল্প প্রার্থী ঠিক করতে না পারার দায়টা কিন্তু একান্তই রাজ্য নেতৃত্বের। এর জন্য অন্তত প্রকাশ কারাতদের দায়ী করা যায় না।

amazon-greatindiansale-strip

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.