কর্তার ইচ্ছেই শেষ কথা, আর কোনও কথা হবে না

স্বরূপ গোস্বামী

প্রায় একমাস আগের কথা। রাজ্যসভা ভোটের জন্য পাঁচ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল তৃণমূল। তৃণমূল না বলে দলনেত্রী বলাই ভাল। কারণ, প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গেল নেত্রীর ফেসবুক পেজে। সেখান থেকেই মিডিয়া জানল। মিডিয়া মারফত তৃণমূল নেতারা জানলেন। কে কোথায় প্রার্থী হবেন, সেটা সম্পূর্ণই সেই দলের ব্যাপার। কিন্তু তৃণমূলে অন্তত এসব আলোচনার ব্যাপার–‌স্যাপার নেই। তিনি যেটা জানিয়ে দেবেন, সেটাই দলের সিদ্ধান্ত। গালভরা কিছু কমিটি আছে। কিন্তু সেসব কমিটির কোনও ক্ষমতা নেই।

বিজেপি অন্তত ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল ছিল না। একটা রেজিমেন্টেড দল। অতীতে এই দলে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হত। ছোট থেকে বড়, নানা সিদ্ধান্তের পেছনে আলোচনার একটা পরিসর ছিল। যুক্তি–‌পাল্টা যুক্তি ছিল। এখন সেসব পাঠ চুকে গেছে। দেশের রাষ্ট্রপতি কে হবেন, এতবড় একটা বিষয় নিয়েও কোথাও কোনও আলোচনা হয় না। মোদিবাবু যে নাম ভাসিয়ে দেবেন, ইচ্ছে থাক না থাক, সেই নামটাই গিলতে হবে। কোথাও কোনও পাল্টা যুক্তি থাকবে না।

ramnath kobind3

সব ব্যাপারে হয়ত আলোচনা করা সম্ভব নয়। সেই সময়ও থাকে না। প্রধানমন্ত্রীর কিছু বিশেষ পছন্দ ও অধিকার থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাই বলে তার পরিসরটা এতখানি?‌ গত এক মাসে অসংখ্য নাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গুঞ্জন ছড়িয়েছে। ঘূণাক্ষরে কখনও রামনাথ কোবিন্দর নাম উঠে এসেছিল?‌ শীর্ষনেতাদের একজনও তাঁর নাম প্রস্তাব করেছিলেন?‌ কোনও রাজ্য থেকে তাঁর নাম এসেছিল?‌

অনেকে বলেন, নোটবাতিলের কথা স্বয়ং অর্থমন্ত্রীও জানতেন না। যেমন সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা জানতেন না দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবু ওঁরা মন্ত্রী আছেন। এতবড় একটা সিদ্ধান্ত। এর আগে দলের কোনও ফোরামে আলোচনা হয়েছে?‌ মন্ত্রিসভা, সংসদীয় কমিটি, কর্মসমিতি–‌কোনও ফোরামে যদি আলোচনা হত, নামটা নিশ্চয় ভেসে উঠত। চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রাখতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের লোক, দলের লোক, মিডিয়া–‌ যে সব নাম নিয়ে আলোচনা করছে, করুক। শেষবেলায় এমন একটা ‘‌চমক’ দেব, কেউ ভাবতেও পারবে না। হ্যাঁ, সেই কাজে তিনি সফল। ‘‌চমক’‌ই দিলেন। কিন্তু দেশের রাষ্ট্রপতি পদটা কি চমক দেওয়ার জিনিস?‌ এখানেও সস্তা চমক দেওয়ার মোহটা ছাড়তে পারলেন না!‌

‌অমিত শাহর ঘোষণায় বলা হল, এটা সংসদীয় দলের সিদ্ধান্ত। এর চেয়ে বড় মিথ্যা আর কিছু হতে পারে!‌ একটা সিদ্ধান্তের পেছনে তো আলোচনার পরিসর থাকে। যুক্তি–‌পাল্টা যুক্তির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া থাকে। রামনাথ কোবিন্দর নাম চূড়ান্ত হল, কিন্তু আর কার কার নাম নিয়ে আলোচনা হল?‌ কে কোন পক্ষে ছিলেন?‌ কে কার নাম প্রস্তাব করেছিলেন?‌ নিশ্চিত থাকতে পারেন, এসব কোনও প্রক্রিয়াই মানা হয়নি। ‘‌তিনি’‌ চেয়েছেন। অতএব, সেটাই হবে। আর কোনও কথা হবে না। কেন্দ্রে এবং রাজ্যে, এরপরেও সবাই দন্ত বিগলিত করে মন্ত্রী থেকে যাবেন!‌

কংগ্রেসেও সেটাই হয়। তৃণমূলেও সেটাই হয়। অন্যান্য আঞ্চলিক দলেও সেটাই হয়। সব দলেই এমন সন্ত্রাসের আবহ। যেখানে আভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। কর্তার ইচ্ছেই সেখানে প্রথম ও শেষ কথা। এই আবহেও একটা দল সত্যিই এখনও অন্যরকম। যেখানে আলোচনা, যুক্তি–‌পাল্টা যুক্তির স্রোত এখনও প্রবহমান। বাম–‌ডান সবাই ঠাণ্ডা মাথায় ভাবুন। না, নাম বলার জন্য কোনও পুরস্কার নেই।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *