অমিত ভট্টাচার্য
তখন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী। রাষ্ট্রপতি হিসেবে এনডিএ মনোনয়ন দিয়েছিল বিজ্ঞানী এপিজে আব্দুল কালামকে। রাজনীতির বাইরের মানুষ। কিন্তু সবমহলেই শ্রদ্ধার পাত্র। অধিকাংশ বিরোধী দলও মেনে নিয়েছিল এই প্রস্তাব। মুলায়ম, মমতার মতো কেউ কেউ তো দাবি করেন, তাঁদের পরামর্শেই কালামকে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে কালামকে মেনে নিতে দেশের সাধারণ মানুষের মনেও তেমন দ্বিধা ছিল না।
এখনও একটা সমীক্ষা করুন, সেরা রাষ্ট্রপতি কে? অনেকেই কিন্তু কালামের নাম করবেন। তাঁরা সবাই যে বিজেপি পন্থী, এমন নয়। অনেক বাম মনষ্ক, কংগ্রেস মনষ্ক, তৃণমূল মনষ্ক বা নিরপেক্ষ মানুষও এই সুরে সুর মেলাবেন। কালামের ঠিক পরেই কে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন? কংগ্রেস কাকে তুলে ধরেছিল? প্রতিভা পাটিল। ভোটে জিতেছিলেন ঠিকই, কিন্তু জনমানসে একটু সমীক্ষা করুন। খোদ কংগ্রেসিরাও তাঁকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনে রাখেননি। তাঁকে সেরা রাষ্ট্রপতি মনে করেন, গোটা দেশে এমন একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ভাবতে অবাক লাগছে, আজ বিজেপি–র মডেল হয়ে উঠছেন প্রতিভা পাটিল। কে রামনাথ কোবিন্দ, এই দেশের অধিকাংশ মানুষই চিনতেন না। এমনকী এ দেশের রাজনৈতিক মহলও তেমনভাবে চিনত না। এই কথাটা বলতে গেলেই বিজেপি শিবির থেকে টেনে আনা হচ্ছে প্রতিভা পাটিলের নাম। বলা হচ্ছে, প্রতিভা পাটিলকে কে চিনত? এবং সেই সঙ্গে প্রতিভা পাটিল সম্পর্কে নানান আপত্তিকর ও কুরুচিকর মন্তব্য। যুক্তিটা এরকম, প্রতিভা পাটিলকে যদি রাষ্ট্রপতি করা যায়, তাহলে এই রামনাথকে নয় কেন? গোটা দেশের মানুষ, রামনাথকে না চিনলেও এটা মানতে দ্বিধা নেই, ব্যক্তিগত যোগ্যতায় তিনি প্রতিভা পাটিলের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। অতিবড় কংগ্রেস সমর্থকও বলবেন না, প্রতিভা পাটিল দারুণ যোগ্য ছিলেন। গত দশ বছরে যে কয়েকটি কারণে কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা হতে পারে, তার একটি কারণ অবশ্যই প্রতিভা পাটিলের মনোনয়ন। বিজেপি–কে সেই প্রতিভা পাটিলের তুলনা টেনে আনতে হচ্ছে!
যে বিজেপি একসময় দেশের সেরা রাষ্ট্রপতি দিতে চেয়েছিল, সেই বিজেপি–কে এখন তুলনা টানতে হচ্ছে প্রতিভা পাটিলের সঙ্গে। ভাবী রাষ্ট্রপতি কেমন হবেন, জানি না। কিন্তু এই তুলনাটা শুনলে তিনি নিজেও কষ্টই পাবেন। যখন এগিয়ে যাওয়ার দিশা হারিয়ে যায়, তখন পিছিয়ে থাকা লোকটার সঙ্গেই তুলনা করতে হয়।