সরল বিশ্বাস
সহজ বিষয়কে অহেতুক জটিল করতে সিপিএমের জুড়ি নেই। রাজ্যসভা মনোনয়ন কাণ্ডে সেটা আবার বোঝা গেল। সীতারাম ইয়েচুরি যে এই রাজ্য থেকে রাজ্যসভায যাচ্ছেন না, তা পরিষ্কার। পলিটব্যুরো খারিজ করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, ধরে নেওয়াই যায়।
কোনটা দলের স্ট্যান্ড, সেটাই মাঝে মাঝে গুলিয়ে যায়। প্রথমে বলা হচ্ছিল, কেউ দুবারের বেশি রাজ্যসভায় যাবেন না। আবার বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে নয়, কেরল থেকে পরের বছর ইয়েচুরিকে রাজ্যসভায় পাঠানো হতে পারে। যদি দুবারের বেশি মনোনয়ন দেওয় না হয়, তাহলে কেরল থেকে পাঠানোর প্রশ্নই বা আসছে কেন? তার মানে কি পশ্চিমবঙ্গ থেকে দুবার, কেরল থেকে আরও দুবার চলতে পারে? নিয়মের ফাঁক খোঁজার চেষ্টা? কিন্তু লোকটা তো একই। তাহলে বাংলা থেকেই যেতে বাধা কোথায়?
বলা হচ্ছে, দলের সাধারণ সম্পাদক কংগ্রেসের সমর্থনে রাজ্যসভায় কেন যাবেন? নিজেদের সেই বিধায়ক সংখ্যা নেই। ইয়েচুরির বদলে যদি অন্য কাউকেও পাঠাতে হয়, সেই কংগ্রেসের সমর্থন নিয়েই পাঠাতে হবে। অর্থাৎ, অন্য কোনও এমপি কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে গেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু ইয়েচুরির যাওয়া চলবে না। এটা কী রকম যুক্তি, মাথায় ঢুকছে না।
কংগ্রেস স্বেচ্ছায় আসন ছাড়তে রাজি। তাঁরা জানিয়েও দিয়েছে, সীতারাম ইয়েচুরি প্রার্থী হলে তাঁরা প্রার্থী দেবেন না। হাইকমান্ড সরাসরি ঘোষণা না করলেও মোটামুটি এটাই তাঁদের স্ট্যান্ড। কংগ্রেস নিজেদের আসন ছাড়তে চাইছে। কিন্তু বামেরা তা নিতে রাজি নয়। কংগ্রেসের ছোঁয়া লাগলে পাছে জাত যায়! একদিকে বিজেপি বিরোধী জোটের কথা বলব, ঘনঘন সোনিয়া–রাহুলদের সঙ্গে মিটিং করব, কংগ্রেসের সমর্থনে সরকারকে সমর্থন করব। আর অন্যদিকে কংগ্রেসের ছোঁয়া লাগাব না। এ কেমন অবস্থান, মাথায় ঢোকে না।
কংগ্রেসের ছোঁয়া নিতে এতই যখন আপত্তি, তাহলে তো বিধানসভা থেকে সব বাম বিধায়ককেই পদত্যাগ করতে হয়। কারণ, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেই ভোটে লড়া হয়েছিল। বাম বিধায়কদের জয়ের পেছনে অল্প হলেও কংগ্রেসের ভোট যুক্ত আছে। কংগ্রেস নিজে জানে, তাদের এই আসনের পেছনে সিপিএমের বিরাট অবদান। তারা বারবার তা স্বীকারও করছেন। তাঁদের দিক থেকে কৃতজ্ঞতায় কোনও ঘাটতি নেই। বিধানসভা ভোটের পরেও তাঁরা বারবার বামেদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অথচ, সিপিএমের মধ্যে অদ্ভুত একটা দোলাচল।
২০০৯ সালে সমর্থন তুলতে গিয়ে কংগ্রেস আর তৃণমূলকে কাছাকাছি এনে দিয়েছিলেন। যার মাশুল আজও দিতে হচ্ছে বাংলার মানুষকে। এবার সীতারাম ইস্যুতেও অহেতুক কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছেন। আবার তৃণমূল ও কংগ্রেসকে পাশাপাশি আসার সুযোগ করে দিচ্ছেন। গ্রামের একটা সাধারণ কর্মীও এই সমীকরণটা বুঝতে পারছেন। প্রকাশ কারাতরা হয়ত অনেক বেশি বোঝেন। তাই এই সহজ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবেন না। বেশি বোঝেন বলেই বেশি বিপদ ডেকে আনেন।