স্মৃতিটুকু থাক
প্রায় আট বছর আগের কথা। সেবার গিয়েছিলাম সিকিম। ফেরার পথে হাতে অনেকটা সময়। দুপুরের মধ্যেই শিলিগুড়ি ফেরার কথা। সেখান থেকে ট্রেন রাতের দিকে। অর্থাৎ, হাতে অনেকটা সময়।
আমি বারবারই বা মমনস্ক। আমার আরেক সঙ্গী, সেও ইতিহাস নিয়েই পড়াশোনা করেছে। পুরোপুরি বাম না বললেও প্রগতিশীল তো বলাই যায়। দুজনেই নকশালবাড়ি আন্দোলনের কথা অল্পবিস্তর জানতাম। ভেতরে ভেতরে একটা রোমাঞ্চও তাড়া করে বেড়াত। কাছেই হাতিঘিসার কাছে একটা ছোট্টা বাড়িতে থাকতেন নকশালবাড়ি আন্দোলনের কিংবদন্তি কানু সান্যাল। ছোট থেকেই চারু মজুমদার–কানু সান্যাল নাম দুটো শুনে এসেছি। চারুবাবুকে দেখার উপায় নেই। কারণ আমাদের জন্মের অনেক আগেই তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু কানু সান্যালের মতো কিংবদন্তি তো আছেন। তাঁর বাড়ি গেলে কেমন হয়! যে নকশালবাড়ি আন্দোলন সারা পৃথিবীতে ঝড় তুলেছিল, স্বয়ং কানু সান্যালের মুখে যদি সেই আন্দোলনের গল্প শোনা যায়, তার থেকে ভাল আর কী হতে পারে! আমার সেই ইতিহাসপ্রেমী বন্ধুটিকে বললাম। সেও বেশ উৎসাহিত।
কিন্তু আমাদের সঙ্গে আরও এক বন্ধু ছিল। সে ফুটবল অন্তপ্রাণ। কিন্তু কানুবাবু সম্পর্কে তেমন আগ্রহ দেখাল না। শেষমেশ আমাদের আর যাওয়া হল না। তার ঠিক কয়েকদিন পর কাগজে পড়লাম সেই মর্মান্তিক খবরটা। নিজের বাড়িতে আত্মহত্যা করেছেন কানু সান্যাল। কাছাকাছি গিয়েও সেই কিংবদন্তি মানুষটির কাছে পৌঁছতে পারিনি। একটা অপরাধবোধ প্রায়ই তাড়া করে বেড়ায়। আজ নকশালবাড়ি আন্দোলনের ৫০ বছরেও সেই আক্ষেপটাই বারবার উঠে আসছে।
সরল বিশ্বাস, কলকাতা ১০৬