বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: পাঁচজনকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল পাণ্ডব গোয়েন্দা। যারা নানা দুর্গম জায়গায় অ্যাডভেঞ্চার করে বেড়ায়। সেই বাবলু, ভোম্বল, বিলু, বাচ্চু, বিচ্চুর দল কত দুঃসাহসিক অভিযান যে চালিয়েছে! সঙ্গে থাকে কুকুর পঞ্চু। এই পাঁচজনের সঙ্গে পঞ্চু নেই। তবে এই পাঁচজনও নিজেদের মতো করে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অভিযান।
অন্যের জন্য ভাবব, আমাদের হাতে সেই সময় কই? সবাই নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। আর হাতে স্মার্টফোন এসে গেলে তো কথাই নেই। সারাক্ষণ খুটখুট করতেই ব্যস্ত। তখন আর মুখ তুলে তাকানোরও ফুরসত নেই। কিন্তু এই পাঁচজন একটু অন্য চোখে পৃথিবীটাকে দেখেন। তাই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে নিজেদের অজান্তেই অনেকটা এগিয়ে যান। এভাবেই তৈরি হয়ে যায় ‘উজানের টানে’।
পঞ্চপাণ্ডবের নামগুলো এই সুযোগে চটপট বলে নেওয়া যাক। সৌমেন সরকার, প্রসেনজিৎ পাঠক, সংহিতা বারুই, হিমাংশু মিধ্যা, প্রসেনজিৎ মুখার্জি। নিজের নিজের কাজ নিয়ে এঁরাও ব্যস্ত। কিন্তু তার মাঝেও সময় বাঁচিয়ে যদি কিছু করা যায়! এঁদের পাশে টাকার ঝুলি নিয়ে কোনও কর্পোরেট সংস্থা নেই। কোনও দেশি বা বিদেশি সাহায্যও নেই। নিজেদের উদ্যোগেই কিছু সংগ্রহ করেন। ভালবেসে সেটাই বিলিয়ে দেন আর্ত মানুষের মাঝে। নানা কর্মকাণ্ড লেগেই থাকে। সেসব ইতিহাসে না গিয়ে একেবারে সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডেই আলো ফেলা যাক। পাঁচজন মিলে ঠিক করলেন, যাঁদের পরণের পোশাক নেই, তাঁদের জন্য যদি কিছু করা যায়। নিজের নিজের উদ্যোগে শুরু করে দিলেন পোশাক সংগ্রহ। প্রথমে পরিবারের লোকজন, আত্মীয়দের বোঝানো শুরু। তারপর বন্ধু, পাড়ার লোক। এভাবেই বৃত্ত বাড়তে লাগল। যার সংগ্রহে যা আছে, এগিয়ে দিলেন। এভাবেই হাজারের ওপর জামা কাপড় জড়ো হয়ে গেল।
কিন্তু কোথায় সেগুলো বিলি করা যায়? দাশনগর স্টেশন হলে কেমন হয়? স্টেশন মাস্টার প্রথমে কিন্তু কিন্তু করছিলেন। পরে এই উদ্যমী পঞ্চপাণ্ডবের নাছোড়বান্দা আবদারে তিনিও রাজি হলেন। বিকেল নামার ঠিক একটু আগে শুরু হয়ে গেল। একে একে হাজির হয়ে যাচ্ছেন প্রান্তিক মানুষেরা। কেউ স্টেশনের কুলি, কেউ রিক্সাচালক, কেউ আবার পথচারী। প্রত্যেকের জন্য একটি করে জামা ও প্যান্ট। নিজেরা ইচ্ছেমতো বেছে নিলেন। ‘উজানের টানে’ জিনিসটা আসলে কী, অনেকেরই ধারণা ছিল না। ব্যানার দেখে অনেকেই ঠিক বুঝতে পারেননি এখানে কী হচ্ছে। হঠাৎ আরপিএফ বাহিনী এসে বলে গেল, এখানে ব্যবসা চলবে না। কিছু সময় দাঁড়ালেন। বুঝলেন, এটা ব্যবসা নয়। তখন অবশ্য আর আপত্তি করেননি। কেউ কেউ একেবারে শেষবেলায় হাজির। কিন্তু ততক্ষণে সাড়ে চারশোর বেশি মানুষকে জামা ও প্যান্ট দেওয়া হয়ে গিয়েছে। কেউ এসে বলে গেলেন, এমন একটা উদ্যোগ, আগে জানতাম না! আমার বাড়িতে অনেক জামা–কাপড় আছে। আমি আপনাদের দিয়ে যাব। এমন টুকরো টুকরো কত ঘটনা। যা ওঁদের আরও অনুপ্রাণিত করল। ওঁরা ঠিক করলেন, এভাবেই আপাতত প্রতি মাসে যদি একবার করে বিলি করা যায়! সেই উদ্যোগটাও এখন থেকেই শুরু হয়ে গেল।