অযোধ্যা, তবে যোগীর রাজ্যে নয়। আমাদের এই বাংলায়। একদিকে সবুজের সমারোহ, অন্যদিকে পলাশের লাল রঙ। একদিকে রুক্ষতা, অন্যদিকে সুন্দরী ঝর্না। সবমিলিয়ে অযোধ্যা সত্যিই অনন্য। সেখান থেকে ঘুরে এসে লিখলেন সংহিতা বারুই।।
অস্ত্র নিয়ে সে কী মিছিল! বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের হাতেও ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে অস্ত্র। সবাই সামিল রামনবমীর মিছিলে। এখানেই থেমে থাকবে না। রামমন্দিরের আওয়াজ আরও জোরালো হবে। ঘুরে ফিরে আসবে অযোধ্যার কথা। বলার অপেক্ষা রাখে না, সবাই মেতে উঠবে সেই অযোদ্যা নিয়ে। কিন্তু আমাদের রাজ্যেও তো একটা অযোধ্যা আছে। কজন গিয়েছেন সেখানে? দিন কয়েক আগেই ঘুরে এলাম সেই অযোধ্যা থেকে। আমাদের রাজ্যে যে এত সুন্দর একটা জায়গা আছে, সত্যিই জানা ছিল না।
কিন্তু শীত ফুরিয়ে গিয়েছে। বসন্তও যাই যাই। দক্ষিণবঙ্গে লু বইতে শুরু করে দিয়েছে। তাই এই সময় কজন সেখানে বেড়াতে যাবেন, জানা নেই। তবে যদি একবার যান, ভালই লাগবে। দিনের বেলায় হয়ত গরম থাকবে। তবে বিকেল বা সন্ধেটা সত্যিই বেশ মনোরম। ভোরের দিকে হালকা একটা হিমেল হাওয়াও পেতে পারেন।
এই অযোধ্যার সঙ্গেও কিন্তু রাম–সীতার কাহিনী জড়িয়ে আছে। শোনা যায়, এখানে এসে সীতা তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন। তখন রাম তিরের সাহায্যে মাটি ফুঁড়ে জল বের করে আনেন। সেই জলাশয়ের নাম আজও সীতাকুণ্ড। সত্যি–মিথ্যে যাই হোক, বিশ্বাস–অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব থাকুক, কিন্তু সেই লোকগাথা দিব্যি বেঁচে আছে। রয়েছে রামমন্দিরও।
অযোধ্যায় যাওয়ার পথ মোটেই খুব দুর্গম নয়। বাংলার যে প্রান্ত থেকেই হোক, পুরুলিয়া চলে আসুন। সেখান থেকে গাড়ি করে নিতে পারেন। খরচ কমাতে চাইলে পাবলিক ট্রান্সপোর্টও আছে। আরও কিছুটা এগিয়ে ঝালদা বা সিরকাবাদ হয়েও উঠতে পারেন। পাহাড়ের পাকদন্ডি বেয়ে উঠে যান। যাঁরা দার্জিলিং গিয়েছেন, সেই রাস্তাটা মনে করুন। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে রহস্য। চারিদিকে সবুজের সমারোহ। এই বসন্তে সবুজের রেশটা কিছুটা ফিকে। তবে লাল রঙের পলাশ মন ভরিয়ে দেবে।
দলমার একটি অংশ হল এই অযোধ্যা। উচ্চতা ২৮০৫ ফুট (৮৫৫ মিটার)। উচ্চতার কারণে কিছুটা ঠান্ডাও আছে। গোগরাবুরু, মায়ুরি পাহাড় তো আছেই। যেতে পারেন বামনী ফলস বা ঠুরগা ফলসেও। এখন জল কিছুটা কম। কিন্তু বর্ষায় এই ফলসগুলোর চেহারাই পাল্টে যাবে। তখন দুর্গম পথ পায়ে হেঁটে সেই ঝর্নার কাছে পৌঁছে যাওয়ার রোমাঞ্চই আলাদা। ভাবছেন পাহাড়ের ওপর থাকবেন কোথায়? নিহারিকা, মালবিকা নামে দুটি সুন্দর হোটেল আছে। মালঞ্চ, বলাকা, মানসী, তমালিকা এসব নামের হোটেলও আছে। আছে দূর্গা লজ। ভারত সেবাশ্রম সংঘের ধর্মাশালাও আছে। বুকিং করে যাওয়াই ভাল।
(প্রথম কিস্তিতে শুধুই অযোধ্যা পাহাড়। এই ভ্রমণ নিয়ে আরও কয়েকটি ভিন্ন আঙ্গিক থেকে লেখা প্রকাশিত হবে। ট্রেকিং করে কীভাবে পৌঁছবেন মাঠাবুরুতে? কোন পথে যাবেন বামনি ফলসে? রোমাঞ্চকর সেই যাত্রার হদিশ পরের কিস্তিতে। )