মদ নিষিদ্ধ হোকঃ ফের ঝড় তুললেন ভিক্টর

বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদনঃ রাস্তার একদিকে চাকুলিয়া, ঠিক অন্যদিকে বিহারের কিশানগঞ্জ। ট্রেন ধরতে তাঁকে আসতে হয় ওই কিশানগঞ্জ স্টেশনেই। ছেলেবেলার অনেকটা সময়, এমনকি এখনও অনেকটা সময় কাটে ওই কিশানগঞ্জেই। তাই কয়েকমাসের বদলে যাওয়া ছবিটা তাঁর চোখে আরও বেশি করে ধরা পড়েছে। সেই ছবিটাই বিধানসভায় তুলে ধরলেন আলি ইমরান। পোশাকি নাম আলি ইমরান রামজ হলেও নিজের এলাকায় বা বিধানসভার ভেতরে তিনি ভিক্টর নামেই পরিচিত।
২৮ জুলাই সে অর্থে বিধানসভায় একটি ঐতিহাসিক দিন। বাজেটের জবাবী ভাষণ দেওয়ার কথা অমিত মিত্রর। দিলেনও। পক্ষে-বিপক্ষে অনেকেই নানা যুক্তি সাজালেন। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে গেলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের এই তরুণ বিধায়ক। তাঁর বক্তৃতা মানেই বিধানসভার বিশেষ আকর্ষণ। শাসক থেকে বিরোধী, দর্শক থেকে প্রেস গ্যালারি- সবাই যেন অপেক্ষা করে থাকে তাঁর জন্য। গত পাঁচ বছরে বিধানসভায় নিজের বাগ্মিতা দিয়ে সবথেকে বেশি যে বিধায়ক নজর কেড়েছেন, তিনি ভিক্টর। এই ভরাডুবির বাজারেও বামেদের মধ্যে সবথেকে বেশি ভোটে জয়ী ওই ভিক্টরই।
নতুন ইনিংসের শুরুটাও দারুণভাবেই করলেন। মোটামুটি তৈরি হয়েই এসেছিলেন। বাজেটের আলোচনা মানে সেখানে রাস্তা থেকে বিদ্যুৎ, শিক্ষা থেকে পুলিশ- সবকিছুই টেনে আনা যায়। অনেকে সেটাই করে থাকেন। পাঁচমেশালি একটা বক্তৃতা, এটাই মোটামুটি রেওয়াজ। কিন্তু ভিক্টর ঠিক করেই এসেছিলেন, শুধুমাত্র একটা বিষয় নিয়েই বলবেন। অন্য কোনও বিষয় টেনে আনবেন না। ঠিক সেটাই করলেন। সোচ্চারভাবে জানতে চাইলেন, আপনার রাজস্ব উঠে আসবে কোথা থেকে ? ছুঁড়ে দিলেন প্রশ্ন, ‘মদ থেকে উঠে আসা রাজস্ব দিয়ে সরকার চলবে ? আরও বেশি উন্নয়নের জন্য লোককে আরও বেশি করে মদ খাওয়াতে হবে, এটাই কি সরকারের নীতি ? যদি মদ থেকে অনেক রাজস্ব উঠেও আসে, সেটা একটা সরকারের গর্বের দিক নাকি লজ্জার দিক ? তারপরই সোচ্চার কণ্ঠে দাবি তুললেন, ‘যদি রাজ্যের উন্নয়ন চান, তাহলে সবার আগে এই রাজ্য থেকে মদ নিষিদ্ধ করুন। সাময়িক রাজস্ব হয়ত কমবে। কিন্তু রাজ্যের অনেক বেশি উপকার হবে। নতুন প্রজন্ম কাজ চায়, আর আপনারা কাজ দিতে পারছেন না বলে মদের বোতল তুলে দিচ্ছেন। একের পর এক পরিবার ভেঙে যাচ্ছে। প্রতিটি ঘরে অশান্তি, নারী নির্যাতন ঘটছে এই মদের জন্য, যে অভিযোগ পুলিশের কাছে পৌঁছচ্ছে না।’ এতই জোরালো ছিল সেই দাবি, সেই সুরেই গলা মেলালেন সুজন চক্রবর্তী, আব্দুল মান্নান, মানস ভুঁইয়ারাও।
মুখ্যমন্ত্রী সভায় ছিলেন না। তিনি ছিলেন উত্তরবঙ্গে। অর্থমন্ত্রী যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক নন, তা বিলক্ষণ জানেন তরুণ বিধায়ক। তাই বাজেট আলোচনা হলেও তাঁর মূল আবেদন বা দাবি রইল মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই। কী কী দাবি উঠে এল, তার নির্যাস বেঙ্গল টাইমসের পাঠকদের জন্য।।

bidhan sabha

১) মুখ্যমন্ত্রী বেছে নিন তিনি কাদের মুখ্যমন্ত্রী ? মাতালদের? নাকি নির্যাতিত মহিলাদের ?
২) আমার বাড়ি বিহার সীমান্তে। আগে বাংলার ছেলেরা বিহারে মদ খেতে যেত। কারণ, সেখানে সস্তায় পাওয়া যেত। এখন বিহারের লোকেরা বাংলায় মদ খেতে আসছে। কারণ ওখানে নিষিদ্ধ, এখানে তা পাওয়া যায়।
৩) নীতীশ কুমারের রাজ্যে কি উন্নয়ন হচ্ছে না ? তিনি চ্যালেঞ্জটা নিতে পেরেছেন। আমাদের রাজ্যে মানুষ তৃণমূলকে ২১১ আসন দিয়েছে। আশা করি, মুখ্যমন্ত্রীও এই চ্যালেঞ্জটা নিতে পারবেন।
৪) যতদূর জানি, মুখ্যমন্ত্রী নিজে মদ্যপান করেন না। অথচ, তিনি কিনা মদের রাজস্ব দিয়ে রাজ্য চালানোর কথা ভাবছেন। এমনটা কেন হবে ? ওই রাজস্ব ছাড়াও রাজ্য চালানো যায়, এটা তিনি দেখিয়ে দিন। তিনি শরীর সচেতন থাকবেন, বাকিদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবেন, এটা হতে পারে না। যদি মদ থেকেই রাজস্ব তুলতে হয়, তাহলে সেই রাজস্বে যেন তাঁরও অবদান থাকে।

victor2
৫) গত তিন মাসে বিহারে ৫৭ শতাংশ অপরাধ কমে গেছে। ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অনেক কমে গেছে। এখান থেকে আমরা শিক্ষা নেব না ?
৬) ঘরে ঘরে অশান্তির খবর রাখেন? ছোট ছোট শহরগুলোয় সন্ধে হলে ছবিটা বদলে যায়। একটা বিরাট অংশের মানুষ আসক্ত হয়ে পড়েছে। তারা ঘরে ফিরে বউদের মারধর করছে, গয়না বিক্রি করছে, ছেলেমেয়েদের ঠিকমতো মানুষ করতে পারছে না। অধিকাংশ পরিবার ভেঙে যাচ্ছে।
৭) আমাদের দল ফরওয়ার্ড ব্লক মদ্যপানের বিরুদ্ধে। আমাদের সদ্যপ্রয়াত নেতা সবাইকে শপথ করিয়েছিলেন কেউ মদ্যপান করবে না। তিনি বলতেন, মদ্যপানের জন্য সামাজিক কাঠামো ভেঙে যাচ্ছে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী নাকি অশোক ঘোষকে অভিভাবক মনে করেন। যদি সত্যিই তিনি অশোক ঘোষকে শ্রদ্ধা করেন, তাহলে, তাঁর স্মৃতিকে সম্মান দিয়ে মদ নিষিদ্ধ করুন।
৮) এই বিধানসভায় আমিই সবথেকে বেশি মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করি। কিন্তু আজ আমি সমালোচনা করতে উঠিনি। তাঁর কাছে আবেদন করতে চাই, বাংলাকে বাঁচান। স্বীকার করছি, বামফ্রন্ট সরকার পারেনি। আপনি করে দেখান। মহাভারতে কৃষ্ণ শিশুপালকে কথা দিয়েছিলেন, তার একশো খানা অপরাধ তিনি ক্ষমা করবেন। আমিও কথা দিচ্ছি, মদ নিষিদ্ধ করুন, আগামী এক বছর এই বিধানসভায় সরকারের বা মুখ্যমন্ত্রীর কোনও সমালোচনা করব না।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.