তোর্সা চ্যাটার্জি
চমক তো একটা ছিলই। ১৫ বছর পর একসঙ্গে পর্দায় ফিরছেন প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা। এতদিন তাঁদের জুটিকে ফিরিয়ে আনার কম চেষ্টা তো হয়নি। কিন্তু ফিরতে রাজি হননি। ফিরছেন যখন, একটা বাড়তি প্রত্যাশা রাখাই যায়।
প্রত্যাশা আরেক জুটিকে ঘিরে। শিবপ্রসাদ-নন্দিতা। চতুরঙ্গ, ইচ্ছে, অলীক সুখ, রামধনুর পর বেলাশেষে। বেলাশেষের পর এই প্রত্যাশা আরও খানিকটা বেড়েছে। তাঁদের নতুন ছবি নিশ্চয় ভালই হবে।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে আবার সাবিত্রী। এই জুটিও যখন আছে, নিশ্চয় কোনও ভাবনা আছে।
এক কামরায় উপল, অনুপম, সুরজিৎ আর অনিন্দ্য। একসঙ্গে চার গায়ক। এখানেও কি কিছু চমক না থাকবে ?
সব মিলিয়ে প্রত্যাশা বেশ উচ্চস্বরেই বাঁধা ছিল। শুধু আমাদের নয়, প্রত্যাশা আরও অনেকেরই ছিল। সেটাই টের পেলাম। নন্দনে না হয় বুদ্ধিজীবী বাঙালির ভিড়। সেখানে টিকিট না পাওয়া তবু মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু সল্টলেকে? সেখানে মাল্টিপ্লেক্সেও লোকে তাহলে ভিড় জমাচ্ছেন! সেখানেও টিকিট নেই? ব্যর্থ হতে হল, কিন্তু আক্ষেপ নেই। যাক, এত লোক বাংলা সিনেমা দেখছেন, আমি না হয় দুদিন পরেই দেখব।
অবশেষে সুযোগ এল। বেশ তৃপ্তি নিয়েই ফিরলাম। শিবপ্রসাদ-নন্দিতা জুটি প্রমাণ করলেন, তাঁদের উপর ভরসা রাখা যায়। এমন একটা জুটিকে ফেরাতে গেলে এমন মঞ্চই দরকার ছিল। দুজনেই নিজেদের সুনাম বজায় রেখেছেন। চিত্রনাট্য বেশ ঝরঝরে। সৌমিত্র-সাবিত্রী সম্পর্কে নতুন কিছু বলার নেই। মুগ্ধ করলেন অপরাজিতা আঢ্য। তাঁর সংলাপগুলো বেশ প্রাণবন্ত। আপাতভাবে বকবক করে চলা এক গৃহবধূ। কিন্তু মাঝে মাঝেই গভীরতার আঁচ পাওয়া যায়।
বরং চার গায়কের দৃশ্যটা কিছুটা যেন অন্যরকম। ব্যান্ডের চার পরিচিত মুখ। তাঁদের ঘিরে যাত্রীদের কোনও উচ্ছ্বাস নেই ? কেউ তাঁদের অটোগ্রাফ নিল না ? কেউ সেলফি তুলল না ? কেউ গান গাওয়ার আবদার করল না? তাঁরা যখন একে অন্যের সঙ্গে আড্ডাই মারছে, তখন সেই আড্ডায় আরও অজানা কিছু উঠে আসতেই পারত।
গানগুলি সব ব্যাকগ্রাউন্ডে। কিন্তু মন্দ লাগবে না। হল থেকে বেরোনোর মুখে একটা রেশ থেকে যায়। কেউ কেউ দেখলাম বেরোনোর সময় গুনগুন করে গাইছেন। বোঝা গেল, এই গানের আবেদনও থেকে যাবে।
সবমিলিয়ে অন্যরকম ভাবনা, স্মার্ট চিত্রনাট্য, প্রাণবন্ত অভিনয়। এই ছবি শুধু কয়েক সপ্তাহের জন্য নয়। অনুরণন হয়ে থেকে যাবে বহুদিন।