সন্দীপ রায়ের চোখে সত্যজিৎ

 

বাইরে থেকে যতটা গম্ভীর মনে হত, মানুষটা মোটেই তেমন ছিলেন না। খুব মজা করতেন। সেন্স অফ হিউমার ছিল অসাধারণ। টুকরো টুকরো নানা স্মৃতি উঠে এল পুত্র সন্দীপ রায়ের কথায়। শুনে এলেন সংহিতা বারুই।

বাবাকে দেখে সকলেরই একটা ভুল ধারণা ছিল -সত্যজিৎ রায় খুব গুরু-গম্ভীর মানুষ। কিন্তু আসলে তিনি ছিলেন খুবই রসিক। কাজের ফাঁকে হাসি ঠাট্টা করতে ছাড়তেন না। একটা ব্যক্তিত্ব ছিল, এটা ঘটনা। ওটা বাইরের আবরণ। ভেতরের মানুষটা একেবারেই অন্যরকম। যাঁরা একটু হলেও তাঁর সঙ্গে মিশেছেন, তাঁরা সেই অন্য মানুষটার খোঁজ পেয়েছেন।

Sandip-ray-2

একটা মজার কথা আপনাদের বলি – ১৯৬১ সালে বাবা নতুন করে  শুরু করলেন ‘সন্দেশ’ পত্রিকা।   প্রথমেই তিনি লিখলেন ‘ বঙ্কুবাবুর বন্ধু’ তারপর লিখলেন শঙ্কু । তারপর যখন  ১৯৬৫ সালে ‘ফেলুদা’ লিখলেন, তখন লক্ষ্য  করলেন ছবি করে তিনি যা চিঠি  পাচ্ছেন, তার থেকে বেশি চিঠি পাচ্ছেন গল্প লিখে। বিশেষ করে ছোটদের গল্প। এই সময় আমার বয়স ১২ বা ১৩ বছর। একদিন আমিও বাবাকে আবদার করে বসি – তুমি তো শুধু বড়দের জন্যই ছবি করছ , ছোটদের জন্যও একটা ছবি কর না। তিনিও শুনলেন আমার কথা । ‘আমার বাবার  কথা বলতে হলে অনেক কথাই বলতে হয়। কিন্তু এত কথা কী করে বলব!  তাই এক কথাই বলতে পারেন – বাবা ছিলেন পাঁচজন মানুষের মতোই।  যদিও সংসারী মোটেই ছিলেন না। সংসারের বিষয় টা সবই সামলাতেন আমার মা । তবে পরিবারের  নানা বিষয়ের প্রতি  তাঁর নজর ছিল । তিনি ছিলেন খুবই ঘরোয়া । কাজের চাপে পরিবারের জন্য খুব একটা সময় দিতে পারতেন না বলে যেখানে শুটিংয়ে যেতেন, সেখানে আমাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। আমি পড়াশোনা করতাম বলে সাধারণত আমার ছুটির সময় দেখেই শুটিংয়ের  সময় রাখতেন।

আমার কাছে তিনি শুধুমাত্র আমার বাবা ছিলেন না , আমার গুরুও ছিলেন। এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখি, আমার তো পোস্ট প্রোডাকশনের প্রতি ঝোঁক ছিল বেশি । তাই সেদিকেই আমি বেশি থাকতাম ।আমার অভ্যাস ছিল প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে তোলা। কিন্ত তাতে কেউ কখনও বিরক্ত হয়নি । তারাও আমাকে খুব সহযোগিতা করেছেন । যাই হোক , বাবা রসিক মানুষ ছিলেন ঠিকই , তবে খাদ্যরসিক বলা যায় না। তাঁকে যা দেওয়া হত, তিনি তাই খেতেন। নিজে  থেকে কোনও দিন কোনও পছন্দের খাবার খেতে চাননি। এছাড়া খাবার টেবিলে গল্প করতে করতে খেলেও খাবারটা খেয়ে নিতেন খুব তাড়াতাড়ি । তবে নলেন গুড়, মিষ্টি দই আর ইলিশ মাছের প্রতি অবশ্য বাবার একটা টান ছিল।

 

(সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখনঃ সংহিতা বারুই)

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.