বই ব্যবসা ছেড়ে হোটেল ব্যবসায় মন দিন

নন্দ ঘোষের কড়চা

নন্দ ঘোষ ঠিক করলেন, বইমেলায় যাবেন। গেলেন। নানা প্রকাশক ও লেখকদের নিয়ে অনেক খোঁজখবর নিলেন। বইমেলা নিয়ে কিস্তি লিখতে চান। তাঁকে কে না করবে?‌ শুধু হল দেজ পাবলিশিংকে দিয়ে। আজ তাঁর শিকার দেজ–‌এর কর্ণধার শুধাংশুশেখর দে।।

কখনও দেজ পাবলিশিংয়ে গিয়েছেন?‌ কখনও সেখানে বই কিনেছেন?‌ বই কিনলে আপনাকে একটি প্লাস্টিকের বই দেওয়া হবে। ব্যাগের একদিকে দেজ পাবলিশিং, অন্যদিকে দিঘার একটি হোটেলের বিজ্ঞাপন। দোকানে গেলে দেখবেন, কেউ বি কিনছেন, কেউ হোটেল বুকিং করছেন। মোদ্দা কথাটা হল, সুধাংশুশেখর দে–‌র দিঘায় একটি হোটেল আছে। যাঁরা বই কিনতে যাচ্ছেন, তাঁদের বলা হয়, দিঘায় গেলে বলবেন, আমাদের হোটেল আছে।

nanda ghosh logo

হোটেল থাকুক, আপত্তি নেই। তা হ্যাঁ মশাই, তাই বলে দেজ–‌এর ব্যাগে সেই বিজ্ঞাপন সেঁটে দিতে হবে?‌ বই আর হোটেলকে ঘেঁটে দিতে হবে?‌ বইয়ের দোকানে না হয় হোটেল বুকিং হচ্ছে। ধরুন আমি দিঘায় গিয়ে সেই হোটেলে উঠলাম। সেখানে যদি দেজ পাবলিশার্সের কোনও বই কিনতে চাই, দিতে পারবেন?‌ মশাই, হোটেলটা নিয়েছেন কীসের টাকায়?‌ সেই বই বিক্রির টাকায়। অথচ, বইটাই ব্রাত্য। ওই হোটেলে তো একটা লাইব্রেরি করতে পারেন। যাঁরা বেড়াযে যাবেন, তাঁরা বই দেখতে পাবেন। তাহলে ব্যাপারটা কিছুটা অভিনব হত। অনেক হোটেলের ভিড়ে আপনাদের হোটেল একটু হলেও অন্যরকম হত।

deys

সেই সুধাংশুবাবু গিল্ডের সভাপতি। প্রতিবছর বইমেলা এলে তিনি মনের সুখে একটি মহান কাজ করেন। মমতা ব্যানার্জির পাঁচটি–‌ছটি করে বই ছেপে দেন। কোনওটা কবিতার, কোনওটা প্রবন্ধের, কোনওটা সায়েরির। দেজ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বইয়ের সংখ্যা কত?‌ তা প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি। এই দেজ কিন্তু যার তার কবিতার বই ছাপে না। সেখানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীদের আলাদা করে কবিতার বই ছাপা হয় না। ছাপা হয় সেরা কবিতার সংকলন। শোনা যেত, সেখানে কার কোন বই হবে, তা নাকি বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের নেতৃত্বে একটি কমিটি ঠিক করত। এখন বোধ হয় সেসব পাঠ উঠে গেছে। নইলে, এইসব বই ছাপা হয়!‌ এই দেজ থেকে কী অসাধারণ সব বই বেরিয়েছে। এখন কিনা নামাঞ্জলি!‌ তারও আবার দু–‌দুটো বই!‌ একটু সময় নিয়ে বইটার পাতা উল্টে দেখেছেন?‌ এতদিনের একটা প্রতিষ্ঠান, একেবারে লাটে তুলে দিলেন!‌ যখন নতুন লেখকরা পান্ডুলিপি নিয়ে আসবে, তাদের যেন বলবেন না, আপনাদের বিশেষজ্ঞ কমিটি আছে। ভুলেও বলবেন না, সাহিত্যিকদের মতামত নিয়ে বই ছাপা হয়।
বই ব্যবসা ছেড়ে এবার মন দিয়ে হোটেল ব্যবসাই করুন। ওটাই বোধ হয় আপনার আসল ঠিকানা।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.