রবি কর
এতদিন সাংবাদিকতা করেও কুণাল ঘোষের বুদ্ধিসুদ্ধি হল না। ভাবছেন অনশন করে জগৎজোড়া নাম কিনবেন।
আজ বুধবার, কুণালবাবুর অনশন ২৬ দিনে পড়ছে। ব্যাপারটার তাৎপর্য বুঝতে পারছেন? ছা-ব্বি-শ দিন। এর আগে একজন ছাব্বিশদিন অনশন করে গান্ধীজীর রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন (রেকর্ডভাঙা কথাটা তিনি নিজেই দাবি করেছিলেন)। কুণাল বাবু আজও যদি অনশন করেন, তাহলে সেই রেকর্ড স্পর্শ করবেন। আর তারপর আর একদিন টানতে পারলেই —।
রেকর্ড রেকর্ড রেকর্ড।
বাংলা আবার ভারতসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।
কিন্তু না। গিনেস বুকের দপ্তরে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম। সেখানে এই অনশনের ব্যাপারে কোনও খবর নেই। ভেবেছিলাম, বিবিসি লাইভ টেলিকাস্ট করবে। অ্যানিমেল প্ল্যানেট বিশেষ প্রোগ্রাম করবে। কিন্তু কোথাও কোনও খবর নেই। সবাই বলছে, এইভাবে অনশন করলে সেই অনশন গ্রাহ্য করা হবে না।
তাহলে কীভাবে অনশন করতে হবে ? সবার সঙ্গে কথা বলে, খোঁজখবর নিয়ে যা জানলাম, অনশন করার কয়েকটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে।কুণালবাবু শুনে নিন।
প্রথমত, জেলখানা বা বন্ধ ঘরের মধ্যে নয়। অনশন করতে হবে প্রকাশ্য রাস্তার মোড়ে। সবাই যাতে ভালভাবে দেখতে পায়, তাই উচু মাচা বেঁধে অনশনে বসতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সবাই সব দেখতে পাবে, তবে দূর থেকে। অনশন মঞ্চ বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখতে হবে। যাতে উটকো লোক বা সাংবাদিকরা যখন তখন সামনে না আসে। সামনে আসা তখনই যাবে, যখন অনশনকারী নিজে চাইবেন।
তৃতীয়ত, মাচার পেছনে থাকবে পর্দা। পর্দার পেছনে থাকবে গ্রিনরুম। সেই গ্রিনরুমে একান্ত আস্থাভাজন ছাড়া কারও প্রবেশ নিষেধ। প্রাকৃতিক কাজকর্ম করার জন্য অনশনকারীকে মাঝে মাঝে মঞ্চ ছাড়তেই হবে। তখন তিনি একবার করে গ্রিনরুমে ঘুরে আসবেন। সেখানে কী হয়, তা এক প্রাক্তন আই এ এস অফিসার তাঁর বইয়ে লিখেছেন। তা পড়ে নেওয়া যেতে পারে। গোপনসূত্রের খবর, গ্রিনরুম থেকে ফেরার পর অনশনকারীর ডান হাত থেকে সুগন্ধ পাওয়া যায়।
চতুর্থত, অনশনের দিন যত গড়াতে থাকবে, অনশনকারীর শরীর ততই ভাঙবে। কিন্তু রেকর্ড করতে হলে শরীর ভাঙছে বলে শুয়ে থাকলে চলবে না। রীতিমতো চ্যাঁচামেচি, ধমক-চমক চালাতে হবে।একে নির্দেশ, ওকে উপদেশ দিতে হবে। অনেক লোক দেখা করতে আসবে। নানান কর্মসূচি চলবে। মোট কথা, চেহারায় বা কাজেকর্মে অনাহারের কোনও চিহ্ন থাকবে না। কুণালবাবুর তো অনশনের আগে থেকেই গালে দাড়ি গজিয়ে গেল।
পঞ্চমত, সরকারি চিকিৎসকদের দল আসবে। তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে। অনশন ভাঙার দিনেও সরকারি হাসপাতাল বয়কট করতে হবে। কারণ, খাওয়া- না খাওয়ার অনেক তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে। চেনা-জানা কোনও নার্সিংহোমে গিয়ে উঠতে হবে।
সর্বোপরি, অনশন মঞ্চ থেকে ছবি আঁকা, কবিতা লেখা-এইসব সৃষ্টিমূলক কাজ চালিয়ে যেতে হবে। রীতিমতো আনন্দের কবিতা। ফুল, পাখি, চাঁদওয়ালা আনন্দের ছবি। একবেলা খেতে না পেলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মাথায় ভূত-প্রেত নাচে। কিন্তু রেকর্ডধারীর মাথায় রবীন্দ্র-পিকাসো নাচে।
কুণালবাবু, আপনিও তো একসময় বহুগুনের অধিকারী ছিলেন। কাগজের প্রথম পাতায় কত লম্বা চওড়া লেখা লিখতেন। এমনকি উপন্যাসও লিখতেন। এক ফোনে একলাখ দিতেন। ব্রিগেডে সঞ্চালনা করতেন। এমনকি গানও গাইতেন। তা অনশন করতে করতে এগুলোও করলেন না কেন? এসব না করলে কি আর রেকর্ড হয় ? এতদিন একসঙ্গে থাকলেন। তবু শিখলেন না কী করে প্রচার পেতে হয়।
অবশ্য আপনাকে প্রচার কে দেবে। সাংবাদিক হয়েও সংবাদজগতে যে মাফিয়ারাজ চালিয়েছেন, তাতে আপনার উপর কারও সহানুভূতি নেই। তাই আপনি যতই অনশন করুন, রেকর্ড আপনি কিছুতেই ভাঙতে পারবেন না।
(বেঙ্গল টাইমসের বিভিন্ন লেখা হোয়াটস আপে বা সোশাল সাইটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সেগুলি কোথা থেকে নেওয়া, তার কোনও উল্লেখ থাকছে না। প্রিয় পাঠকদের অনুরোধ, যদি শেয়ার করতে হয়, করুন। কিন্তু লেখকের নাম ও বেঙ্গল টাইমসের কথা উল্লেখ করুন। আশা করি, এই ন্যূনতম সৌজন্যটুকু দেখাবেন।)