ইন্দ্রাণী রাহা
আরাধনার সেই গানের দৃশ্যটা মনে পড়ছে ? টয় ট্রেনে করে পাহাড়ে উঠছেন শর্মিলা ঠাকুর। আর পাশ দিয়ে জিপ ছুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন রাজেশ খান্না। প্রিলিউডে সেই মাউথ অর্গান। একটু পরেই শুরু ‘মেরি স্বপ্নো কি রানি কব আয়েগি তু’।
সেই রাজেশ খান্নাও নেই। শর্মিলাও নিজেকে প্রায় গুটিয়েই নিয়েছেন। তবু এত বছর পর আবার বাঙালির নস্টালজিয়াকে উস্কে দিতে পারে টয় ট্রেন। আর মাত্র পাঁচদিন। বড়দিন থেকেই পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা পথ দিয়ে ফের চলতে শুরু করবে টয় ট্রেন।
শিলিগুড়ি থেকে টয় ট্রেনে দার্জিলিং যাওয়ার রোমাঞ্চই আলাদা। সেই রোমাঞ্চ থেকেই এতদিন বঞ্চিত হচ্ছিলেন পর্যটকরা। প্রায় চার বছর ধরে বন্ধ ছিল শিলিগুড়ি-দার্জিলিং টয় ট্রেন পরিষেবা। তবে দার্জিলিং থেকে কার্শিয়াং রুটে একটি ট্রেন আসা যাওয়া করত। পর্যটকদের জন্য দার্জিলিং থেকে ঘুম পর্যন্ত একটি ট্রেন চালানো হত। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘জয় রাইড’। সেই ট্রেনে ঘুম রেল মিউজিয়াম, মনেস্ট্রি, বাতাসিয়া লুপ দেখিয়ে আবার দার্জিলিংয়ে ফিরিয়ে আনা হত পর্যটকদের। কিন্তু সেই মাপা পথে সেই রোমাঞ্চটা ছিল না।
বছর পাঁচেক আগে বড় সড় ধস নেমেছিল পাগলাঝোরা আর তিনধারিয়ায়। বছর তিন আগের ভূমিকম্পের পর সেই ধস বেড়ে আরও মারাত্মক চেহারা নেয়। খাদের ওপর ঝুলে থাকা সেই রেললাইনের ছবিটা বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছিল। রাস্তা মেরামতের দায়িত্ব কার, এ নিয়ে তিন চার বছর ধরে নানা টানাপোড়েন চলল। উত্তর পূর্ব রেল, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ, পি ডব্লু ডি- তিন পক্ষই নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে তৎপর ছিল। শেষমেষ রাস্তা মেরামত হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানোও হচ্ছে। পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে ২৫ ডিসেম্বর থেকে।
কিন্তু বিদেশি পর্যটকদের কাছে কীভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায় এই ট্রেন চালু হওয়ার খবর ? তাই নিয়ে নানা মহলে তৎপরতা শুরু হয়েছে। রাজ্য পর্যটনের হেলফ ডেস্ক তাদের মতো করে চেষ্টা করছে। বিভিন্ন পর্যটন সংস্থাগুলিও আসরে নেমেছে। হোটেল মালিকদেরও দাবি, শুধু ট্রেন চালু করলেই হবে না। পর্যটকদের কাছে ঠিকঠাক প্রচার করতে হবে। এই ট্রেনের আকর্ষণে হয়ত পর্যটক বাড়তে পারে। কতগুলি আসন থাকবে বা কীভাবে বুকিং হবে, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন শুরু হয়ে গেছে। যাঁরা ওঠার টিকিট পাবেন না, তাঁরা নামার টিকিটের জন্য চেষ্টা চালাবেন।
সবমিলিয়ে হারানো সেই নস্টালজিয়া আবার ফিরে আসছে। রাজেশ-শর্মিলা নাই বা থাকলেন, নাই বা বাজল সেই মাউথ অর্গান। স্টিম ইঞ্জিনের ধোঁয়া মিশে যাক ওই ভেসে বেড়ানো মেঘের সঙ্গে। পাইন বনের মাঝখান দিয়ে এগিয়ে চলুন।