যাঁরা সু-মনে আছেন, শুধু তাঁদের জন্য

আজ ১৬ মার্চ। কবীর সুমনের জন্মদিন। কেউ তাঁকে পছন্দ করেন। কেউ হয়ত করেন না। নিজের জন্মদিন  সম্পর্কে কী অনুভূতি এই নাগরিক কবিয়ালের ? ভাগ করে নেওয়া যাক পাঠকদের সঙ্গে। যাঁরা তাঁকে পছন্দ করেন না, এই লেখা তাঁদের জন্য নয়।

কবীর সুমন

মাননীয় সহনাগরিকরা,

আমার জন্মদিন উপলক্ষ্যে যাঁরা আমায় শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তাঁদের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, আমি তাঁদের আমার ভালোবাসা ও শুভকামনা জানাচ্ছি।

অদ্ভূত এক পরিবারে আমার জন্ম।
আমাদের পরিবারে কখনও কারুর জন্মদিন পালিত হতো না। আমার বাবা মা দাদা – কার যে কবে জন্মদিন আমি জানিনি। আমার জন্মদিনও কেউ মনে রাখতেন না। ছেলেবেলায় মা’কে দু’একবার দোল পূর্ণিমা তিথিতে বলতে শুনেছি – আজ তোর জন্মতিথি। ব্যাস। ঐ পর্যন্ত।
পায়েস বা বিশেষ কোনও রান্না – ওসবের বালাই ছিল না।

ঈশ্বর বা ধর্মের বিন্দুবিসর্গও যেমন ছিলেন না তেমনি ছিল না জন্মদিনের উল্লেখ।

kabir suman

তেমনি কোনওদিন শুনিনি আমার বাবা মা কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায় সম্পর্কে কুকথা বা কুমন্তব্য করছেন। এমনকি, তাঁদের নিরীশ্বরবাদ তাঁরা তাঁদের দুই ছেলের ওপর চাপিয়ে দিতেও চেষ্টা করেননি কখনও। একবার পাড়ায় সরস্বতী পুজোয় অঞ্জলি দিতে যাওয়ার আগে বাড়িতে কিছু খাইনি। খাইনি তো খাইনি। ব্যাপারটা জানতে পেরে বাবা মা কোনও মন্তব্যই করেননি তেমন। মৃত্যুর আগে জ্ঞান হারানোর মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর ঈশ্বর বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলেন। তেমনি আমার ৫১ বছর বয়সে আমি আইনের সাহায্য নিয়ে আমার নাম পাল্টানোর সময়ে আমার মা আমায় বলেছিলেন, “বেশ করছিস, ঐ পদবীটা ত্যাগ করছিস। আমার সমর্থন রইল।” বাবা তার আগে মারা গেছেন।

পরে কতো “হিন্দু” নামধারী আমার মা’কে ফোন করে বলেছেন, “আপনার ছেলে তো মুসলমান হয়ে গেল।” আমার মা জবাব দিয়েছেন, “তাতে তোমার বাপের কী?”

এইরকম এক মহিলার পেটে আমি এসেছিলাম। এইরকম এক মহিলা আমায় এই পৃথিবীতে এনেছিলেন।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.