হেমন্ত রায়
গত কয়েকবছর ধরেই পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি নিয়ে অদ্ভুত এক ছেলেখেলা দেখা যাচ্ছে। আসলে, এই কমিটির কী গুরুত্ব, সেটাই অধিকাংশ বিধায়ক বোঝেন না। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বোঝে না। তাই এই কমিটিকে ঘিরে নাবালকের মতো আচরণ চলতেই থাকে।
দলগুলি জানে, পিএ কমিটির চেয়ারম্যান আলাদা গাড়ি পান। ব্যাস, এদের বিদ্যে বুদ্ধির দৌড় ওইটুকুই। কিন্তু ওই কমিটির চেয়ারম্যান হতে গেলে যে একটু লেখাপড়া লাগে, এই সহজ বিষয়টা তাঁরা বুঝতেও চান না।
আগের দফায় স্পিকারমশাই নিজের ইচ্ছেমতো যাকে তাকে এই কমিটির চেয়ারম্যান বানিয়ে দিয়েছেন। গত বছর সদ্য বিজেপি ছেড়ে আসা মুকুল রায়কে ওই চেয়ারে বসিয়েছেন। যিনি প্রকাশ্যে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তাঁকে স্পিকারমশাই জোর করে বিজেপি বিধায়ক বলে চালাতে চাইছেন। এবারও তাঁকেই পুনরায় চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
পিএ কমিটির কী কার্যাবলি, সেই সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। এই কমিটি সরকারের যাবতীয় আয় ব্যায়ের হিসেব তলব করতে পারে। ক্যাগ রিপোর্ট চেয়ে পাঠাতে পারে। যে কোনও দপ্তরের সচিবকে ডেকে পাঠিয়ে জবাবদিহি চাইতে পারে। তার জন্য একটু লেখাপড়া লাগে। সিএজি রিপোর্ট খুঁটিয়ে পড়ে, সেখান থেকে ভুল বের করার জন্য একটু বিদ্যে লাগে।
প্রথমত, এইসব রিপোর্ট আমলারা তৈরি করেন। কাগজ কলমের রিপোর্টে ত্রুটি ঢেকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা থাকে। তথ্যের জাগলারি থাকে। সেটাকে কাউন্টার করতে গেলে বিটুইন দ্য লাইনস পড়তে জানতে হয়। যাঁদের এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে, তাঁদের অনেকেই জটিল ইংরাজির ওই রিপোর্ট পড়ে তার মানেই বুঝতে পারবেন না। তার ওপর তাঁরা ত্রুটি খুঁজে বের করবেন?
অধিকাংশ সদস্যের এক পাতা ইংরাজি পড়ে তার মানে বোঝার ক্ষমতা নেই। তাঁরা কিনা আমলাদের আয় ব্যয়ের হিসেব পর্যালোচনা করবেন? তাই এই কমিটিতে যাঁরাই থাকবেন, তাঁদের পেটে অন্তত একটু বিদ্যে থাকা জরুরি। যাঁরা কলেজের গন্ডি মাড়াননি, এই কমিটি অন্তত তাঁদের জন্য নয়।
আর স্পিকার যদি বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে এমন লোকেদেরই সদস্য ও চেয়ারম্যান করেন, তাহলে বুঝতে হবে, এই কমিটি সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান গম্যিও নিতান্তই সীমিত।