অনু গল্প:‌ ক্ষত

‌ক্ষত

কুমকুম বসুদাস‌

আমার ডাইনিং রুমের আয়নাটা খুব সুন্দর। বাবা বলতেন, ‘‌বেলজিয়ামের কাচ। যত্ন করিস’‌। মুছি কলিন্স দিয়ে। একটু ঘষাতেই চকচককরে। ওতে প্রতিফলিত প্রতিবিম্বগুলো যেন কথা বলে। মেহগনি ব্রাউন ফ্রেমটা ওর জৌলুস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

প্রচুর গেষ্ট আসে আমার বাড়িতে। খানাপিনা লেগেই থাকে। সুক্তি–‌শশাঙ্ক, অমল–‌মঞ্জু, কাবেরী–‌স্নেহাশিস, আরও কত কে। আমি আয়নার সামনে বসে দেখি ওদের হাসিঠাট্টার প্রতিচ্ছবি গুলো। আনন্দে উল্লাসে ভরে ওঠে ঘরটা।

এমন সময় মোবাইলটা বেজে ওঠে। ডিসগাষ্টিং। এমন আনন্দ–‌মুহূর্তেকে রসভঙ্গ করতে চাইছে। সুইচ অফ করে দিই। অনভিপ্রেতর কন্ঠরোধ করার মধ্যে বেশ একটা বিজয়ীর উল্লাস আছে। দেখি আয়নায় আমার উল্লসিত দৃষ্টির প্রতিফলন।

মাত্র দু পেগ। তাতেই উত্তেজিত আমি। আয়নার ভাষা পড়তে পারি এই আধধরা নেশাতেই। রাত বাড়ে। এবার গুডনাইটের পালা। একে একে চলে যায় সবাই। আয়নাটা পড়ে থাকে একভাবে। আমাকে কাছে ডাকে ইশারায়।

চোখ আধঘুম। নেশায় বিভোর আমি। আবার ফোনটা বাজছে। আবার সুইচ্ অফ। আয়নায় পড়ে প্রতিবিম্ব। কুসুম! সিক্ত চোখ, খোলা চুল, সাদা শাড়ি। পিছন ফিরে দেখি কেউ কোথাও নেই। আয়নাটা তুলে এক ঘুষিতে আছাড় মারলাম। বিকট শব্দে উপুড় হয়ে পড়ল সে। মনে পড়ল বাবার কথা— ‘‌যত্ন করিস’‌।

দু’‌হাতে সোজা করে তুলে দেখি, একটা বড় স্ক‍্যার্চ পড়ে গেছে। কুসুমের প্রতিবিম্ব দু’‌ভাগে। ওর জলভরা চোখ দুটো সস্নেহে মুছিয়ে দিলাম। মাথায় বুলিয়ে দিলাম হাত। ভাঙা কাচের ঘষায় হাত হল রক্তাক্ত। সে রক্তের ধারাগড়িয়ে পড়ে রাঙিয়ে দিল কুসুমের সিঁথি।‌‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.