সঞ্জয়ের ফাঁসি মানেই আরও একটা প্রমাণ লোপাট

রক্তিম মিত্র

সবাই উঠে পড়ে লেগেছেন। সব ব্যাটাকে ছেড়ে এখন সঞ্জয় ব্যাটাকেই ধর। যেভাবেই হোক, এই ব্যাটাকে শুলে চড়াতে হবে।

একটা সভ্য, গণতান্ত্রিক দেশে ফাঁসি থাকা উচিত নাকি উচিত নয়, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু সঞ্জয়ের ফাঁসির জন্য রাজ্য সরকার ও সিবিআই এত উদগ্রীব কেন?‌ ধর্ষণের প্রতি জিরো টলারেন্স?‌ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির তৈরি করা?‌ এর কোনওটাই নয়। অন্তত গত কয়েক মাসে রাজ্য সরকার আর সিবিআই–‌এর গতিপ্রকৃতি মোটেই তেমনটা বলছে না।

রাজ্য পুলিশ শুরু থেকেই বলে আসছে, সঞ্জয়ই একমাত্র অপরাধী। কী আশ্চর্য!‌ বিস্তর তদন্ত করে সিবিআই–‌ও তাতেই সিলমোহর দিল। দেওয়ারই কথা। অপরাধের প্রমাণ লোপাট করতে বাংলার পুলিশ যেমন চেষ্টার কোনও কসুর করেনি, ঠিক তেমনই তদন্তে ঢিলেমি দিয়ে তাকে ঠান্ডা ঘরে পাঠাতে সিবিআই–‌ও চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেনি। রাজ্য পুলিশ যেমন বিশেষ একজনের কথায় ওঠা–‌বসা করে, ঠিক একই কথা প্রযোজ্য সিবিআই–‌এর ক্ষেত্রেও। তারা ইচ্ছে করে তদন্তে ঢিলেমি দিচ্ছেন বা অপরাধীদের আড়াল করছেন, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। কারণ, এতখানি স্বাধীনতা তাঁদের নেই। তাঁরা সেটাই করছেন, যেটা প্রভুরা চাইছেন। আর সিবিআই–‌এর প্রভু কে, সেটা কারও অজানা নয়।

সঞ্জয় যদি ফাঁসিতে ঝুলে পড়ে, তাহলে অনেকের অনেক সুবিধা হয়। রাজ্য সরকার ও সিবিআই— দুই চূড়ান্ত অপদার্থ সংস্থাই দু’‌হাত তুলে উদ্বাহু নৃত্য করতে পারবে। নিজেরাই নিজেদের সাফল্যের ঢাক বাজাবে। আর অন্তত বড় সড় দুর্নীতি বেরিয়ে আসার তেমন সুযোগ থাকবে না। আরও কারা কীভাবে জড়িত, এই ব্যাপারে যে মানুষটা সবথেকে বড় সাক্ষী হয়ে উঠতে পারত, সে যদি ফাঁসি কাঠে ঝোলে, তাহলে আর চিন্তা কী?‌

একদল লোক দ্রুত ময়না তদন্ত সেরে ফেলতে চাইছে। একদল লোক তড়িঘড়ি করে দেহ পোড়াতে চাইছে। একদল লোক হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়। একটা প্রশাসন তাদের কারও টিঁকিও স্পর্শ করে না। আরেক দল তদন্তে এসে সময়মতো চার্জশিটও দিতে পারে না। আরেকটা সরকার ইচ্ছে করে সিবিআই–‌কে ঘুম পাড়িয়ে রাখে। এই দুই অপশক্তি যদি এক হয়ে কারও ফাঁসি চায়, সন্দেহ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এতদিন দু’‌পক্ষই অনেক প্রমাণ লোপাট করেছে। সঞ্জয়ের ফাঁসি হলে সেই প্রমাণ লোপাটের বৃত্ত এ যাত্রায় সম্পূর্ণ হয়।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.