সোহম সেন
সময় কত দ্রুত পেরিয়ে যায়। মনে হচ্ছে, এই তো সেদিন। দেখতে দেখতে ৩৫ বছর হয়ে গেল! শচীন তেন্ডুলকারের অভিষেকের মুহূর্তটি আবার যেন জীবন্ত হয়ে উঠল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীনের পথ চলা আর আমাদের বেড়ে ওঠা মোটামুটি একই সময়ে। আমরা তখন নিতান্তই কিশোর। গাভাসকার অবসর নেওয়ার পর কিছুটা মুষড়ে পড়েছিলাম। আর কি কোনও গাভাসকার উঠে আসবেন না? দিলীপ বেঙ্গসরকার তার আগে যতই কম্পিউটার র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান হোন, কিন্তু কেন জানি না, তাঁকে সামনে রেখে স্বপ্ন দেখা যেত না। সঞ্জয় মঞ্জরেকার উঠে আসছিলেন ঠিকই, কিন্তু মনে হচ্ছিল, বেশিদিন থাকবেন না। শ্রীকান্ত বা সিধুকে ঘিরে সেই ভরসা রাখা যায় না। আজহারউদ্দিন দারুণ ফিল্ডিং করবেন, কব্জির মোচড়ে দারুণ কিছু শট নেবেন, ব্যস ওই পর্যন্তই।
অর্থাৎ, একটা শূন্যতা থেকেই গিয়েছিল। সেই আবহেই এসে গেলেন শচীন তেন্ডুলকার। ষোল বছরের একটা ছোট্ট ছেলে। তখনও গোঁফ গজায়নি। প্রথম টেস্ট ছিল করাচিতে। সেই টেস্ট টিভিতে দেখানো হয়নি। যতদূর মনে পড়ে, পরের টেস্টও টিভিতে দেখানো হয়নি। দেখেছিলাম শেষ দুটো টেস্ট। অর্থাৎ, লাহোর আর শিয়ালকোট। ছেলেটার ব্যাটিং দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এই বাচ্চা ছেলেটা ইমরান খান, ওয়াসিম আক্রামদের কী অনায়াসে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। শিয়ালকোটে নাকে ওরকম চোট পাওয়ার পর যে কেউ ঘাবড়ে যেতেন। কিন্তু ওই অবস্থাতেও শচীন মাঠ ছাড়েননি। কী দুরন্ত প্রত্যাঘাত। এইটুকু ছেলে, তার বুকের ভেতর এত আগুন!
যদিও টিভিতে দেখার সুযোগ হয়নি। তবু মনে রাখব ফয়জলাবাদে দ্বিতীয় টেস্টের একটা মুহূর্ত। প্রথম ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে দুরন্ত ৫৯ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি তখন ৮ রানে ব্যাট করছেন। উল্টোদিকে শতরানের দোরগোড়ায় মহম্মদ আজহারউদ্দিন। শতরানের জন্য তাড়াহুড়ো করে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। ওটা কোনওভাবেই রান হয় না। অর্থাৎ, আজহার রান আউটের মুখে। সেদিন আজহারকে বাঁচাতে বেরিয়ে এসেছিলেন শচীন। নিজের উইকেট বিসর্জন দিয়ে (রান আউট হয়ে) আজহারকে শতরান উপহার দিয়ে গেলেন। ভেবে দেখুন, ষোল বছরের এক কিশোর কিনা সিনিয়র ক্রিকেটারকে বাঁচাতে হেলায় নিজের উইকেট বিসর্জন দিচ্ছেন। সেদিনই বোঝা গিয়েছিল, এই ছেলে সত্যিই লম্বা রেসের ঘোড়া।
ওই টেস্টটা টিভিতে হয়তো দেখা হয়নি। কিন্তু না দেখলেও কিছু দৃশ্য মানসপটে থেকে যায়। দৃশ্যকল্প তৈরি হয়ে যায়। আর সেই ছবিটাই স্থায়ী হয়ে থেকে যায়।
৩৫ বছর পর পেরিয়ে গেল। সেই সুখস্মৃতিগুলো যেন ফিরে এল। এভাবেই সুখস্মৃতিগুলো ফিরে ফিরে আসুক।