পঙ্কজবাবুকে হেনস্থা!‌ নিজেদের আরও নগ্নই করল পুলিশ

রক্তিম মিত্র

প্রশাসন চালাতে গেলে কিছু সদিচ্ছা লাগে। কিছু শিক্ষাদীক্ষাও লাগে। আরও যেটা লাগে, তা হল সহিষ্ণুতা। কিন্তু কোনওটাই যদি না থাকে, তাহলে যেভাবে প্রশাসন চলার, সেভাবেই চলছে।
উদাহরণ দিতে চাইলে ভুরি ভুরি দেওয়া যায়। কিন্তু এখন অতীতের ঘটনা টেনে আনতে গেলে মহাভারত হয়ে যায়। তাই শুধু সাম্প্রতিক ঘটনাটুকু উল্লেখ করাই যথেষ্ট। যেমন, প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত। তাঁকে যেভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে, তাতে সরকার ও পুলিশের নগ্ন রূপটা আরও একবার প্রকট হল।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত একটি নাগরিক কনভেনশনে পঙ্কজবাবু সরকারের বিরুদ্ধে কিছু মন্তব্য করেছিলেন। বেছে বেছে তাঁর দেওয়া একটি রেফারেন্সকে কেন্দ্র করে অহেতুক জলঘোলা করার চেষ্টা। আর জি করের মতো সুরক্ষিত জায়গায় কীভাবে একজন চিকিৎসক খুন হয়ে গেলেন, কীভাবে ধর্ষণ হল, এটাই ছিল মূল প্রশ্ন। সেটা বলতে গিয়ে উত্তর কলকাতার একটি জায়গার কথা উদাহরণ হিসেবে টেনে এনেছিলেন। প্রথমে পেটোয়া মিডিয়ায় জলঘোলা। পরে থানায় এফআইআর হয়ে গেল। পঙ্কজবাবুর বক্তব্যে নাকি ওই এলাকার মানুষদের সম্মানহানি হয়েছে। এবার পুলিশ কী করল?‌ ওই ছেঁদো এফআইআর–‌কে ঢাল করে ডেকে পাঠাল। বর্ষীয়াণ মানুষটিকে তিন ঘণ্টা বাইরে বসিয়ে রাখা হল। তারপর তিন ঘণ্টা জেরা করা হল।

এত সামান্য কারণে প্রাক্তন আইজি–‌কে এভাবে হেনস্থা করা যায়!‌ একজন থানার ওসির এত সাহস হবে?‌ কে এই সাহস দিচ্ছে?‌ ওপর থেকে কারা এমন নির্দেশ পাঠালেন?‌ এমন নির্দেশ কি সত্যিই পুলিশের পক্ষে দেওয়া সম্ভব?‌ থানার ওসি তো ছেড়ে দিন, স্বয়ং পুলিশ কমিশনারের এতখানি সাহস হবে?‌ এতখানি স্বাধীনতা তাঁর আছে?‌ অর্থাৎ, আরও ওপর থেকে এই নির্দেশ এসেছিল।

ধরেই নিলাম, পঙ্কজবাবুর মন্তব্যের ওই অংশটা হয়তো না বললেও পারতেন। হয়তো উদাহরণ দিতে গিয়ে প্রসঙ্গ টেনে এনেছে। তাতে বিরাট কিছু মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল বলে মনে হয় না। তার জন্য এমন এমন ধারায় মামলা দিতে হল?‌ তার জন্য ডেকে এনে থানায় এভাবে হেনস্থা করা হল?‌ তার পরের ঘটনা আরও মারাত্মক। পঙ্কজ বাবুরা যখন বেরিয়ে আসছেন, তখন স্থানীয় লোকেদের লেলিয়ে দেওয়া হল। তাঁরা জুতোর মালা নিয়ে হাজির। তাঁরা আদৌ পঙ্কজ দত্তকে চেনেন?‌ পঙ্কজ দত্ত কী বলেছেন, তাঁরা আদৌ জানেন?‌ কে এই দুর্বৃত্তদের জড়ো করল?‌ তারা থানার সামনে এসে প্রাক্তন আইজিকে হেনস্থা করার স্পর্ধা পেল কোত্থেকে?‌

পুলিশ নিজেকে কোথায় টেনে নামাচ্ছে?‌ আর জি করে যাঁরা ভাঙচুর চালিয়েছে, সেই দুর্বৃত্তরা জানত, পুলিশ কিছুই করতে পারবে না। পুলিশের অপদার্থতা সম্পর্কে তাদের ধারণা যে একেবারে ঠিক ছিল, সেটা পুলিশ নিজেই প্রমাণ করে দিয়েছে। এক্ষেত্রেও সেই বিশেষ এলাকায় যারা পঙ্কজ বাবুকে হেনস্থা করল, তারা কি শুধু পঙ্কজবাবুকে হেনস্থা করল!‌ থানা চত্বরে একজন প্রবীণ নাগরিক হেনস্থার শিকার হলেন, এটা পুলিশের লজ্জা। সেই দুর্বৃত্তরাও জানে, পুলিশ কিছু করতে পারবে না। কারণ, পুলিশ আর এই দুর্বত্তদের টিকি একই জায়গায় বাঁধা।

পুলিশ আর অপরাধীর তফাতটা ক্রমশ কমে আসছে। অপরাধীর গায়ে পোশাক থাকে না, পুলিশের গায়ে থাকে, এটাই যা তফাত।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.