রক্তিম মিত্র
আবার তিনি আসরে। এবার তিনি দাবি করে বসলেন, রবিবারের মধ্যে অপরাধীকে ধরে ফাঁসির ব্যবস্থা করতে হবে। এই দাবিতে তিনি নাকি পথে নামবেন।
বক্তার নাম? মমতা ব্যানার্জি। তাঁর পুলিশ নাকি তদন্তের নব্বই ভাগ শেষ করেই এনেছিল। রবিবারের মধ্যেই নাকি তদন্ত শেষ হয়ে যেত। তাই সিবিআইকেও তিনি ওই রবিবার পর্যন্তই সময় দিয়েছেন। তার মধ্যেই নাকি ফাঁসির ব্যবস্থা করতে হবে।
ভাবতেও অবাক লাগে, এমন এক অর্বাচীন ব্যক্তি এই রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। পুলিশ নাকি আসল লোককে একদিনের মাথায় ধরে ফেলেছে। সেই লোকটিই যে আসল লোক, তা মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চিতভাবে বলছেন কীভাবে? তাহলে আর তদন্তের দরকারই বা কী? আচ্ছা, গোটা বাংলা যখন প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠল, সেই রাতে আরজি করে কারা ভাঙচুর চালাল? পুলিশের ক্ষমতা আছে তাদের ধরার? পুলিশ তো কার্যত নিধিরাম সর্দার হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল। কারণ, পুলিশ খুব ভাল করেই জানত, ওটা কাদের কীর্তি। আর যারা ভাঙচুর চালাল, তারাও ভাল করে জানত, তাদের কিছুই হবে না। পুলিশ কিছুই করবে না। হ্যাঁ, পুলিশকে আপনি এমন জায়গাতেই এনে নামিয়েছেন। যেখানে যাঁরা নির্যাতিত, তারা পুলিশকে ভরসা করতে পারেন না। কিন্তু যাঁরা অপরাধী, তাঁরা বেশ ভরসা করতে পারে।
সিবিআই–কে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার আগে আত্মসমীক্ষা করুন। পুলিশকে বিশ্বাস করা যায়, এমন জায়গায় কি তাদের রেখেছেন? পুলিশ প্রশাসন কীভাবে চালাতে হয়, তার কতটুকুই বা বোঝেন? যিনি তিনদিনের মধ্যে ফাঁসি চেয়ে রাস্তায় নামার হুমকি দেন, তাঁর যতই আইনের ডিগ্রি থাক, বলতে বাধ্য হচ্ছি, তিনি আইনের কিস্যু বোঝেন না। এই জ্ঞান নিয়ে যদি কেউ আইন পাস করেন, তাহলে তাঁর ডিগ্রি ভুয়ো কিনা প্রশ্ন তুলতেই হয়। আর এই জ্ঞান নিয়ে যদি কেউ পুলিশমন্ত্রী হন, তাহলে বলতেই হয়, স্বাধীন ভারতে এমন মূর্খ পুলিশমন্ত্রী কোনও রাজ্যে আসেনি।
যে অপরাধ করেছে, সে আসল অপরাধী, কে বলল? রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে তাকে যারা আড়াল করছে, তাদের অপরাধ কি কোনও অংশে কম? কেন আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, সেই রায় কি খতিয়ে দেখেছেন? সেই রায়ের মানে বোঝেন? পুলিশের কাজকর্মে চূড়ান্ত গাফিলতি ছিল বলেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এগুলো আপনার বোঝার কথা নয়। যেমন, ওই রায় পড়ার বা তার মানে বোঝাও আপনার কম্ম নয়।
সিবিআই–এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। গত কয়েক বছরে তাঁদের অপদার্থতা সীমাহীন। সে অন্য কারণ। অন্য এক রাজনৈতিক বোঝাপড়া। সিবিআই নিষ্ক্রিয় থাকে বলেই শিক্ষা দুর্নীতির আসল নাটের গুরু এখনও জেলের বাইরে। সেই কারণেই বালি, কয়লা থেকে শুরু করে একের পর এক সংগঠিত অপরাধের মূল পান্ডা এখনও গলা বাজিয়ে হুঙ্কার দিতে পারে।
দোষটা তাঁর নয়। সত্যি তো, তাঁর কী দোষ। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে চাইতেই পারেন। কিন্তু তারপরেও যাঁরা পরপর তিনবার তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসান, দায়টা সেই রাজ্যবাসীর।