সরল বিশ্বাস
আচ্ছা, ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে কি শোভন চ্যাটার্জিকে দেখা যাবে?
গত কয়েকদিন ধরে এমন একটা আবহ তৈরি করা হচ্ছে, যেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি এসে ধর্মতলার মঞ্চে তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন। শোভনবাবু একসময় কলকাতার মেয়র ছিলেন। তাই অনেকে ভাবতে পারেন, স্বয়ং নেতাজি এসে যোগ দিচ্ছেন।
আচ্ছা, গত কয়েক বছরে শোভনবাবু ছিলেনটা কোথায়? ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে সেই যে ঘরে খিল দিয়েছেন, আর তো দেখা যায় না। ভুল লিখলাম। দেখা যায়। মাঝে মাঝে তাঁরা তা তা থৈ থৈ নৃত্য করেন। মাঝে মাঝে নিজে নিজেই জামাই ষষ্ঠী করেন। আরও কতরকম ভাঁড়ামি যে করেন! আর টিভিতে সেগুলো ফলাও করে দেখানোও হয়।
ভাবতেও অবাক লাগে, যিনি ক্যামেরার সামনে এই স্তরের ভাঁড়ামো করছেন, তিনি একসময় কলকাতার মেয়র ছিলেন। ভাবতে আরও অবাক লাগে, এই মানুষটি আবার যে কোনওদিন কলকাতার মেয়র হয়ে যেতে পারেন।
আচ্ছা, গত তিন বছর ধরে তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোন কথাটা বলেছেন? কখনও কালীঘাটে গিয়ে ভাইফোঁটা নিয়েছেন। কখনও তাঁর বাড়িতে তৃণমূল নেতাদের বৈঠক হয়েছে। যিনি ভাইফোঁটা নেওয়ার ডাক পান, তাঁর মঞ্চে ডাক পেতে কতক্ষণ! প্রশ্ন হল, রফাসূত্রটা কী বেরোলো? মেয়র পদ ফিরে পাবেন কিনা। বান্ধবীর পুনর্বাসন হবে কিনা। এই দুটো হলে তিনি আছেন। না হলে নেই। মোদ্দা কথা, তিনি না ফিরে যাবেনটা কোথায়! গোলপার্কের ছাদে বসে শহর দেখতে একটা সময় ভাল লাগে। আবার একটা সময় তা বিরক্তিকর হয়ে ওঠে।
বান্ধবীর সম্মানরক্ষার্থে এক কথায় কলকাতায় মেয়রের পদ ছেড়েছিলেন। মন্ত্রিত্বও ছেড়েছিলেন। বুকের পাটা লাগে বৈকি। তার পর তাঁর ওপর কী রকম আঘাত নেমে এসেছিল, তাও তিনি বহুবার বলেছেন। সেই পটভূমি তাঁকে আস্তে আস্তে দলবদলের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। দুজনেই একসঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে।
আসলে, শোভনবাবু তাঁর বান্ধবীকে যতই ভালবাসুন, বান্ধবী আদৌ কতখানি বাসেন, সন্দেহ আছে। ক্ষমতাহীন, অর্থহীন শোভনকে সত্যিই কি তিনি বেশিদিন হজম করতে পারবেন? শোভনবাবুর রূপ বা যৌবন দেখে তিনি আসেননি। এমনকী ‘ভালবাসার সে মন’ সেটা দেখেও আসেননি। কারও সাজপোশাক অবশ্যই তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। কিন্তু ঘটনা হল, সেই সাজপোশাক একজন মানুষের রুচিটাও চিনিয়ে দিয়ে যায়। সারাক্ষণ এত অলঙ্কারে তাঁরাই আবৃত থাকতে পারেন, যাঁদের ভেতরের অলঙ্কার বলে কিছু নেই। ভেতরের অলঙ্কার থাকলে বাইরের অলঙ্কার দিয়ে এভাবে মুড়ে ফেলতে হয় না।
আচ্ছা, বৈশাখীদেবীকে আমবাঙালি কী কারণে মনে রাখবেন? তিনি একসময়ের অধ্যাপিকা, এই কারণে নয়। একেবারেই অন্য কারণে। এবং সেই পরিচিতি তিনি নিজেই তৈরি করেছেন। শোভন, বৈশাখি, রত্না মানেই মেগা সিরিয়ালের টিআরপি–কে হারিয়ে দেওয়া এক প্লট। একটি পুরুষকে ঘিরে দুই নারীর যেন কলতলার ঝগড়া। শুধু মিডিয়াকে দুষলে হবে? তাঁরা দিনের পর দিন ক্যামেরার এই খেউড় চেয়েছেন বলেই মিডিয়া ড্রয়িং রুমে ঢোকার ছাড়পত্র পেয়েছে।
সহজ কথা, শোভনবাবুর টাকা ও ক্ষমতা না থাকলে বৈশাখির কাছে শোভনবাবুর কোনও মূল্য নেই। এটা এতদিনে শোভনবাবু নিজেও হয়তো বুঝতে পারছেন। তাই যে বান্ধবীর জন্য গ্যাস খেয়ে খুদিরাম হয়েছিলেন, সেই বান্ধবীর জন্যই ফিরতে হবে। কিন্তু বান্ধবীও যে প্রবল উচ্চাকাঙ্খী! শুধু শোভনের পুনর্বাসন হল কিন্তু তাঁর হল না, তাহলে কী হবে? অপেক্ষা করুন। আরও বড় কোনও চিত্রনাট্য হয়তো অপেক্ষা করছে।