বিধানসভাকে কোন ছ্যাবলামির স্তরে নামাচ্ছেন?‌

সরল বিশ্বাস

আচ্ছা, বিধায়করা কোথায় শপথ নেন?‌ কে তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান?‌ আমজনতা জানতেন?‌ না জানলেও ক্ষতি নেই। কারণ, জানার দরকারও পড়েনি। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে উপনির্বাচনে জয়ী দুই বিধায়ককে ঘিরে যে রঙ্গতামাশা চলছে, তাতে ওই শপথ জিনিসটাই ছ্যাবলামির স্তরে এসে গিয়েছে।

অর্বাচীন লোকেরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসে গেলে যা হওয়ার, তাই হচ্ছে। যাঁরা স্বভাবগত ছ্যাবলা, তাঁরা সবকিছুতেই ছ্যাবলামি টেনে আনেন। সেই আওতা থেকে শপথগ্রহণও বাদ যায় না। সাধারণভাবে বিধাযকরা শপথ নেন স্পিকারেরও আগে। প্রবীণ কোনও সদস্যকে প্রোটেম স্পিকার বানানো হয়। রাজ্যপাল আগে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান। তারপর রাজ্যপালের অনুমতিক্রমে সেই প্রোটেম স্পিকার বাকি বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করান। উপনির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের অনুমতিক্রমে বিধানসভার স্পিকার শপথবাক্য পাঠ করান।

কিন্তু এক্ষেত্রে যেমন রাজ্যপাল ছেলেমানুষি করছেন, তেমনই ছেলেমানুষি করছেন বিধানসভার স্পিকারও। দুই সাংবিধানিক পদে আসীন দুই মানুষ নিজেদের মধ্যে কথা বলে ব্যাপারটা মিটিয়ে নেবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, দুই পদে যে দুজন বসে আছেন, দুজনেই নিজেদের চেয়ারকে শুধু কলঙ্কিতই করে গেছেন। ওই চেয়ারে বসার কোনও যোগ্যতাই তাঁদের নেই। স্পিকারের কর্মকাণ্ড যত কম বলা যায়, ততই ভাল। ওই চেয়ারের কী মর্যাদা, তিনি এ জন্মে আর বুঝে উঠতে পারবেন না। তাই গত দশ বছরে গোটা বিধানসভাকেই ভাঁড়ামির জায়গায় পরিণত করেছেন। যাক, সে কথা। রাজ্যপাল। তিনি একের পর এক সস্তা নাটকবাজি করে চলেছেন। এবারও তিনি গোঁ ধরে বসলেন তিনি শপথবাক্য পাঠ করাবেন। তিনি শপথবাক্য পাঠ করালেই বা কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত?‌ স্পিকার যে শপথবাক্য পাঠ করান, সে তো রাজ্যপালের অনুমতি সাপেক্ষে। তাহলে স্বয়ং যদি রাজ্যপাল শপথবাক্য পাঠ করাতে চান, তাতেই বা সমস্যা কোথায়?‌

এই সমস্যা আলোচনা করে সমাধান করাই যেত। কিন্তু শাসকদলও বিষয়টাকে কাদা ছোড়াছুড়ির স্তরেই নিয়ে গেল। উপনির্বাচনে দুই নবনির্বাচিত প্রার্থী কিনা বিধানসভার সিঁড়িতে ধর্নায় বসে গেলেন। তাঁরা এখনও শপথও নেননি। অর্থাৎ, সরকারিভাবে এখনও বিধায়কই নন। তাঁরা বিধানসভার ভিতর ধর্না দেওয়ার অনুমতি পেলেন কোথা থেকে?‌ সায়ন্তিকা কিনা বলে বসলেন, তিনি রাজভবনে যেতে ভয় পাচ্ছেন। ইঙ্গিতটা কোনদিকে, সেটাও বুঝিয়ে দিলেন। বোঝাতে চাইলেন, রাজ্যপালের কাছে মহিলারা নিরাপদ নন। এত বড় একটা কথা বলার স্পর্ধা তিনি পেলেন কোথা থেকে?‌ আসলে, তিনি দেখছেন, মু্খ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের নামে যা পারছেন, বলছেন। তিনি দেখছেন, স্পিকার রাজ্যপালের নামে যা পারছেন, বলছেন। তিনি দেখছেন, অন্যান্য মন্ত্রীদের মুখেও কোনও আগল নেই। তাঁরাও সাংবিধানিক প্রধানের নামে যা পারছেন, বলছেন। তাই তিনিও সেই সুরে বাজছেন। তাঁকে শাসন করাও কেউ নেই। বারণ করারও কেউ নেই। বরং, এই অসভ্যতার পর উৎসাহ দেওয়ার অনেকে আছেন।

ভাবতে অবাক লাগছে, কাদের হাতে থাকছে এই বিধানসভা!‌ দু’‌জন বিধায়কের শপথকে ঘিরে এমন কলতলার ঝগড়া কি কাম্য?‌ এমন রাজ্যপাল থাকলে এমনই হয়। এমন স্পিকার থাকলে এমনই হয়। এমন বিধায়করা নির্বাচিত হলে এমনই হয়।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.