এমন কীর্তিমানকে বারবার টিকিট কে দেয়!‌

রক্তিম মিত্র

সল্টলেকের জন্য সত্যিই নাকি তাঁর লজ্জা হয়। খোদ নবান্ন থেকে এমনটাই মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর প্রশাসনিক বৈঠক মানেই লাইভ টেলিকাস্ট। তাঁর বৈঠক মানেই নির্লজ্জ গ্যালারি শো। অন্যদের ছোট করে নিজেকে মহান করে দেখানোর চেষ্টা। এবারও সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হল না। কেন সল্টলেকে টাকা নিয়ে হকার বসানো হচ্ছে। এসব নিয়ে তিনি সোচ্চার হলেন। সুজিত বসুর নামও টেনে আনলেন।

মিডিয়া এটা নিয়ে কয়েকদিন লাফালাফি করবে। সুজিতকে তোপ মুখ্যমন্ত্রীর— এই জাতীয় শিরোনাম চলবে। মুখ্যমন্ত্রী কাউকে রেয়াত করেন না। পেটোয়া লোকেরা এরকম একটা ব্যাখ্যাও করে যাবেন। কিন্তু এর দায় কার?‌ এই লজ্জা তাঁর নিজের নয়!‌

আচ্ছা, সল্টলেকে কারা থাকেন?‌ খোঁজ নিলে দেখা যাবে, অন্তত হাজার তিনেক ডাক্তার। অন্তত এক হাজার প্রাক্তন, বর্তমান আইএএস, আইপিএস। অন্তত এক হাজার প্রাক্তন–‌বর্তমান বিচারপতি। অন্তত হাজার পাঁচেক ইঞ্জিনিয়ার। অন্তত হাজার পাঁচেক অধ্যাপক, গবেষক। অন্তত হাজার পাঁচের নানা দপ্তরের ছোট–‌বড় অফিসার। এই এলাকার জনপ্রতিনিধি কে?‌ মানে, এই এলাকায় তৃণমূল কাকে টিকিট দিয়েছে?‌ তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?‌

গোদা বাংলায় তিনি মাধ্যমিক পাসটুকুও করেননি। এমনকী মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতাটুকুও অর্জন করেননি। সল্টলেকের মতো জায়গায় একজন নন ম্যাট্রিক লোককে প্রার্থী করতে হয়!‌ একবার নয়, দুবার নয়। পরপর ছবার এই কীর্তিমানকে তিনিই প্রার্থী করেছেন। প্রথম তিন‌বার নাম ছিল বেলগাছিয়া পূর্ব (যার মধ্যে গোটা সল্টলেকটাই পড়ত)‌। ২০১১ থেকে নাম বদলে বিধাননগর। একবারও মনে হল না, সল্টলেকের মতো জায়গায় একজন নন ম্যাট্রিক লোককে প্রার্থী করা যায় না!‌ এতে সেই এলাকার মানুষকে অসম্মান করা হয়!‌

সেই এলাকার লোকেদেরও বলিহারি। একজন নন ম্যাট্রিক লোককে জনপ্রতিনিধি ভাবতে তাঁদের লজ্জা করে না!‌ এই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলারাই দন্ত বিগলিত করে এই নন ম্যাটট্রিককে ভোট দিয়েছেন। সে লজ্জা সেই ভোটারদের। কিন্তু এই কীর্তিমানকে প্রার্থী কে করেছেন?‌ তাঁর কোনও দায় নেই?‌ তিনি দারুণ শিক্ষানুরাগী বা তিনি দারুণ সমাজসেবক বলে টিকিট পান, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। এই লোকটি যে কাজে পারদর্শী, সেই যোগ্যতার কারণেই তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি টাকা তুলতে পারেন, এই কারণেই তিনি প্রার্থী। তিনি জানেন, কোথায় নজরানা পৌঁছে দিতে হয়। সেই নজরানা ঠিক জায়গায় ঠিক সময়ে পৌঁছে দিতে পারেন বলেই তিনি বারবার টিকিট পান। তাই মিডিয়ার সামনে বড়জোর মুখ্যমন্ত্রী লোকদেখানো দু–‌এক লাইন বলবেন। এর বেশি কিছু করার ক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রীর নেই। তিনি সত্যিই বড় অসহায়। কারণ, কাকে কত দিয়েছি, সুজিত যদি বলতে শুরু করেন, মুখ্যমন্ত্রী মুখ লুকোনোর জায়গা পাবেন না।

তিনি কি দলের প্রতি দারুণ অনুগত!‌ তিনি কি মুখ্যমন্ত্রীকে দারুণ ভক্তিশ্রদ্ধা করেন?‌ এমন ভাবারও কারণ নেই। একবার সাহস করে টিকিট না দিয়ে দেখুন। অন্য দলের পতাকা ধরতে সাতদিনও সময় নেবেন না। মুখ্যমন্ত্রীকে চরম গালমন্দ করতে সাতদিনও সময় নেবেন না। তাই, কেন হকার বসাচ্ছো, এইটুকুই বলা যাবে। কেন খাল বুজিয়ে ইমারত তুলছ?‌ এত এত শপিং মল কীভাবে হল?‌ এইসব প্রশ্ন তোলার ক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রীর নেই। অর্থাৎ, কেউ একজন খুন বা ধর্ষণ করলে ‘‌এই, তুমি পেয়ারা চুরি করে ঠিক করোনি’‌ বলে লোকদেখানো মৃদু বকে দেওয়ার মতোই। ‌নিজেকে যতই রাফ অ্যান্ড টাফ বলুন। এই মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে বড় করুণাই হয়।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.