রক্তিম মিত্র
কেন্দ্রে তাহলে কারা সরকার গড়ছে? আচ্ছা, নীতীশ কুমার কি ইন্ডিয়া শিবিরে চলে যাবেন? চন্দ্রবাবু নাইডু নিশ্চয় বিজেপিকে লেজে খেলাবেন! তিনি অন্যদিকে চলে যাবেন না তো! কদিন ধরেই এরকম জল্পনা চলছে। কিছু মিডিয়া, কিছু পোর্টালে চলছে। আর সেগুলির লিঙ্কই কপি পেস্ট হয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে হোয়াটস্অ্যাপে।
কেন এমন অবান্তর প্রশ্ন ওঠে, মাথায় ঢোকে না। বিজেপি সংখ্যা গরিষ্ঠতার কাছাকাছি। এনডিএ জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাপিয়ে অনেকটাই বেশি। তারপরেও এই সংশয়ের কী মানে! গত কয়েকবছরে আমরা কোন ছবিটা দেখেছি? বিজেপি ম্যাজিক ফিগারের থেকে অনেক পিছিয়ে, সেই অবস্থায় অন্য দল ভাঙিয়ে তারা সরকার তৈরি করেছে। অথবা, অন্য দলের সরকার চলছে। সেখান থেকে মাঝপথে কিছু বিধায়ককে কেনাবেচা করে নিজেদের সরকার তৈরি করেছে। সেই দল গরিষ্ঠতা পাওয়ার পরেও সরকার গড়তে পারবে না? এই যাঁদের রাজনীতি বোধ, তাঁরাও কিনা ‘রাজনৈতিক বিশ্লেষক’ হয়ে যাচ্ছেন!
বিজেপি যদি দুশোর নীচেও নেমে যেত, তাহলেও সরকার গড়তে কোনও সমস্যা হত না। কারণ, বিরোধী শিবিরে তাদের অনেক গোপন বন্ধু আছে। একবার ভ্রু পল্লবে ডাক দিলেই তারা চন্দনের বনে ঠিক হাজির হয়ে যাবে। আর চন্দ্রবাবু নাইডু খামোখা অন্য শিবিরে কেন যেতে যাবেন? তিনি বরাবর বিরোধী থেকে শাসকের দিকে গেছেন। খামোখা শাসক থেকে বিরোধীদের দিকে যেতে যাবেন কেন? তিনি এত বছর বাদে একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। তিনি ভাল করেই জানেন, কেন্দ্রের বিরোধিতা করতে গেলে তাঁর সরকার যে কোনওদিন পড়ে যেতে পারে। তারপরেও তিনি খামোখা কেন্দ্রকে নিজের শত্রু বানাতে যাবেন কোন দুঃখে!
হ্যাঁ, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় বিজেপির আগের সেই দাপট হয়তো কিছুটা কমবে। মোদি যেভাবে কথায় কথায় আমিত্বের ফোয়ারা ছোটাতেন, আপাতত কিছুদিন তা কমবে। কিন্তু আমিত্ব যাঁর রক্তে এভাবে মিশে আছে, তিনি বাকি পাঁচ বছর ‘আমরা’র জয়ধ্বনি দেবেন, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। কদিন গেলেই আবার সেই স্বমহিমায় ফিরবেন। তিনিও ভাল করেই জানেন, চন্দ্রবাবু নাইডু বা নীতীশ কুমারেরও যাওয়ার বিশেষ জায়গা নেই। তাঁদেরও ইচ্ছেয় হোক, অনিচ্ছেয় হোক, এই শিবিরেই থাকতে হবে। যদি চলেও যান, কিচ্ছু যায় আসে না। অন্য শিবির থেকে অনেক বন্ধু হাজির হয়ে যাবে। বাম সরকারে কি সিপিএমের কর্তৃত্ব ছিল না? ইউপিএ সরকারে কি কংগ্রেসের কর্তৃত্ব ছিল না? তেমনই এই সরকারে বিজেপির কর্তৃত্বও থাকবে। আর বিজেপির কর্তৃত্ব থাকলে মোদির কর্তৃত্বও থাকবে। বড়জোর, কৌশলগত কারণে সুর কিছুটা নরম হবে।