গণতন্ত্রে সত্যিই সঙ্কট, তাই সৌমিত্ররাও ‘‌পূর্ণ মন্ত্রী’‌ হতে চান

সরল বিশ্বাস

বছর পাঁচ আগের কথা। তিনি সেবার সদ্য তৃণমূল থেকে বিজেপিতে এসেছেন। দুই দলেই দলবদলুদের বিশেষ কদর। তাই বিজেপিতে এসে টিকিট পেতে সমস্যা হয়নি।

আগেরবার দেওয়ালে লেখা ছিল, তৃণমূল প্রার্থী সৌমিত্র খাঁকে ভোট দিন। পরেরবার দেওয়াল লিখন বদলে ‘‌বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁকে ভোট দিন’‌। যে দলে ছিলেন, সেই দলের বিরুদ্ধেই তিনি তখন হুঙ্কার ছাড়ছেন। বলে বসলেন, ‘‌আমি চ্যালেঞ্জ করছি, অভিষেক ব্যানার্জির ক্ষমতা থাকলে আমার বিরুদ্ধে এসে দাঁড়াক।’‌

অভিষেককে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তেই পারেন। কিন্তু ‘‌আমার কেন্দ্রে এসে দাঁড়াক’‌ এই চ্যালেঞ্জটার কী মানে?‌ বিষ্ণুপুর লোকসভা আসনটি তপশিলি জাতি সংরক্ষিত। সেখানে অভিষেক কীভাবে দাঁড়াবেন?‌ তাঁর যদি এতই চ্যালেঞ্জ নিতে ইচ্ছে হয়, তিনি গিয়ে ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়াতে পারতেন। বা অন্য কোনও কেন্দ্রে চ্যালেঞ্জ করতে পারতেন।

আসলে, এই হল মুশকিল। তিনি যে তপশিলি সংরক্ষিত আসনে লড়ছেন, সেই আসনে যে জেনারেল কাস্টের কেউ দাঁড়াতে পারবেন না, এটুকুও খেয়াল থাকে না। এইসব লোক এমপি হলে যা হয়, তাই হয়েছে। এবার জেতার পর তিনি দাবি জানিয়ে বসলেন, ‘‌আমাকে পূর্ণমন্ত্রী করা হোক।’‌ দাবি জানিয়েই ক্ষান্ত থাকলেন না। একেবারে প্রকাশ্যে বিভিন্ন চ্যানেলে বলতে থাকলেন। আমাকে পূর্ণমন্ত্রী করতে হবে, কাউকে এমন দাবি করতে শুনিনি।

তিনি বললেন, সুকান্ত আমার থেকে জুনিয়র। আমি ওর আগে থেকে এমপি। কিন্তু এই আহাম্মককে কে বোঝায়, ডক্টর সুকান্ত মজুমদার একজন ডক্টরেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। আর তিনি ছিলেন হায়ার সেকেন্ডারি পাস পঞ্চায়েতের ঠিকাদার। এই তফাতটা কতটা, বোঝার বিদ্যেটুকু তিনবারের সাংসদের নেই। আসলে, যাঁর পঞ্চায়েত মেম্বার হওয়ার যোগ্যতা নেই, তিনি হঠাৎ করে এমপি হয়ে গেলে এমনটাই হয়। তিনি কিনা দাবি করে বসছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করতে হবে। তাও আবার পূর্ণ মন্ত্রী। আচ্ছা, উচ্চারণ তো করে দিলেন। ‘‌পূর্ণ মন্ত্রী’‌ বানানটা লিখতে দিলে লিখতে পারবেন!‌ এমপি হওয়ার আগে বিষ্ণুপুর বানানটাও ইংরাজিতে লিখতে পারতেন কিনা সন্দেহ।

আসলে, দোষটা শুধু সৌমিত্রর নয়। আশেপাশে এমন এমন লোকজনদের দেখছেন, তাঁর মনে হয়েছে, এঁরা হলে আমি নয় কেন?‌ তিনি দেখছেন, প্রধানমন্ত্রী এমন একটা বিষয় নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি করেছেন, যে সাবজেক্টটার কোনও অস্তিত্বই ছিল না। তিনি দেখছেন, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন একজন, যিনি সিবিআই বা ইডি রিপোর্ট দিলে এক পাতা পড়ে বুঝতে পারবেন না।

এই রাজ্যেও নমুনার অভাব ছিল না। তিনি দেখেছেন মাধ্যমিক পাস নিশীথ প্রামাণিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি দেখেছেন জন বার্লা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাই হয়তো তাঁরও ইচ্ছে হয়েছে। আসলে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পদটার কী ওজন, এটা বুঝতে গেলে ন্যূনতম যেটুকু পেটে বিদ্যে থাকা দরকার, তা এই কীর্তিমানের নেই। কারও শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কটাক্ষ করা সমীচিন নয়। কিন্তু পনেরো লাখ মানুষের প্রতিনিধির যদি ন্যূনতম কাণ্ডজ্ঞানটুকু না থাকে, তখন আয়না ধরাটাও জরুরি।

হ্যাঁ, এই অর্বাচীনরাই সাংসদ। এই অর্বাচীনরাই কেন্দ্রে পূর্ণ মন্ত্রী হতে চান। কাকে জেতালেন, বিষ্ণুপুরের মানুষও কি একটু আত্মসমীক্ষা করবেন না!‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.