এমন ভণ্ড প্রধানমন্ত্রী থাকলে এই কীর্তিমানরা সাত লাখ ভোটেই জিতবেন

রক্তিম মিত্র

তখনও ভাল করে গণনা শুরুও হয়নি। তখনও কোনও কেন্দ্রের ফলাফলই সামনে আসেনি। হঠাৎ দেখা গেল, ডায়মন্ড হারবারের বিজেপি প্রার্থী চিৎকার করছেন। হলটা কী?‌ জানা গেল, কাউন্টিং সেন্টারে তাঁর এজেন্টদের নাকি হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মারধর করা হচ্ছে। অত্যাচার এতটাই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়, তাঁরা গণনা কেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে চলে এলেন। প্রার্থীও চলে এলেন। এজেন্টরাও চলে এলেন। নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়ে ধর্নায় বসে গেলেন। এক ঘণ্টা যেতে না যেতেই বাম এজেন্টরাও বেরিয়ে এলেন। অভিযোগ সেই একই। গণনা কেন্দ্রে চলছে তুমুল সন্ত্রাস। কেন্দ্রীয় বাহিনী নীরব দর্শক।

না, এতে খুব একটা অবাক হওয়ার মতো উপাদান নেই। একের পর এক ঘটনাক্রমের দিকে তাকালেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। বিশেষ একজনের বিরুদ্ধে তদন্তের সময় সিবিআই–‌ইডি কেন ঘুমিয়ে থাকে, তা তো দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। এবার ভোটের কার্যক্রমে আসা যাক। বিজেপি একের পর এক কেন্দ্রে প্রার্থী দিলেও একটি কেন্দ্রে ঝুলিয়ে রাখা হল। সেখানে নাকি বিরাট চমক অপেক্ষা করছে। শেষমেশ এমন একজনকে দাঁড় করানো হল, পর্বতের মুষিক প্রসব বললেও কম বলা হয়। বিজেপি কর্মীদের মধ্যেই সমীক্ষা করুন। অন্তত আশি শতাংশ সমর্থক তাঁর নামটাও কখনও শোনেননি। যা হওয়ার, তাই হল। বিজেপি যে এই আসনটা যুবরাজকে ওয়াকওভার দিতে চাইছে, সেটা বুঝতে কারও বাকি থাকল না। প্রচারেও সেই একপেশে ছবিটা বেরিয়ে এল। অধিকাংশ বিধানসভায় বিজেপির প্রচারের কোনও অস্তিত্বই রইল না।

ভোটের দিন কী হয়েছে, তার কতটুকুই বা মিডিয়ায় এসেছে। শুধু এটুকু দেখা গেল, যেখানেই বিজেপি প্রার্থী যাচ্ছেন, তাঁকে ঢুকতেই দেওয়া হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় বাহিনী নীরব দর্শক। কারণ, যাঁরা বিজেপি প্রার্থীকে হুঙ্কার দিয়ে চলেছেন, তাঁরা বিলক্ষণ জানেন, ইনি আসলে কেউ নন। ইনি আসলে ডামি ক্যান্ডিডেট। কেন্দ্রীয় বাহিনী কিছুই করবে না। কারণ, তাঁদের কিছু করতে বারণ করা আছে।

এবার গণনা। ফলতা বা সাতগাছিয়ার প্রত্যন্ত বুথে কী হয়েছে, ফলাফলে বোঝা যাবে। কিন্তু গণনা কেন্দ্রে তো ন্যূনতম নিরাপত্তা থাকবে। সেখানেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কার্যত পাত্তাই দিল না শাসকদল। বুঝিয়ে দেওয়া হল, তোমাদের মুরোদ জানা আছে। বাহিনীর কর্তারাও জানেন, খোদ প্রধানমন্ত্রী এখানে ললিপপ প্রার্থী দিয়েছেন, খোদ প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সব কেন্দ্রে প্রচারে গেলেও এই কেন্দ্রে আসেননি। খোদ প্রধানমন্ত্রী এই কীর্তিমানের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত হতে দেন না। সিবিআই ইডি কে ঘুম পাড়িয়ে রাখেন। অতএব বাহিনীর জওয়ানদের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া উপায় কী?‌

হ্যাঁ, এই লোকটি সাত লাখ ভোটে জিতবেন না তো কে জিতবেন?‌ এরপরেও এই প্রধানমন্ত্রীকে সাহসী প্রধানমন্ত্রী বলবেন?‌ যাঁরা মোদি মোদি জয়ধ্বনি দেন, যাঁরা এই বাজারেও বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, বুকে হাত রেখে বলুন তো, এমন কাপুরুষ এমন ভণ্ড প্রধানমন্ত্রী আপনি আপনার জীবনে দেখেছেন?‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.