এই হার দলবদলুদের প্রাপ্যই ছিল

ধীমান সাহা

এক দলের টিকিটে নির্বাচিত হন। কয়েকদিন পরেই মনে হল, অন্য দলে গেলে কেমন হয়!‌ অন্য দল মানে, শাসক দল। আর তাঁরাও হাত বাড়িয়েই থাকেন।

এই বাংলায় এমন নজির কম নেই। গুনতে গেলে অন্তত পঞ্চাশ ছাপিয়ে যাবে। যাঁরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে জিতে এসেছেন। অর্থাৎ, শাসকদলের বিরুদ্ধে মানুষের রায় নিয়ে জিতে এসেছেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই কী অবলীলায় তাঁরা শাসকদলে ভিড়ে গেলেন!‌ যে দল থেকে বিধানসভায় জিতে এসেছেন, সেই সদস্যপদ ছাড়ারও প্রয়োজন মনে করেননি।

এবারের লোকসভা নির্বাচনেও ছিলেন এমন কয়েকজন মহান দলবদলু। যাঁরা বিজেপির টিকিটে নির্বাচিত। কিন্তু তৃণমূলের পতাকা ধরেছিলেন। স্পিকার মশাই বলে চলেছিলেন, ওঁরা বিজেপিতেই আছেন। কিন্তু ব্রিগেড থেকে যখন লোকসভার প্রার্থীতালিকা ঘোষণা হল, দেখা গেল, তাঁরা ড্যাং ড্যাং করে প্যারেডে হাঁটছেন।

সেই তালিকায় কারা ছিলেন?‌ রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণী। বনগাঁয় বিশ্বজিৎ দাস। রানাঘাটে মুকুটমণি অধিকারী। তিনজনই বিজেপির টিকিটে বিধায়ক থাকাকালীনই তাঁরা তৃণমূলের প্রার্থী হলেন। এমনকী তারপরেও পদত্যাগ করলেন না। বিজেপির বিধায় থাকতে থাকতেই তাঁরা তৃণমূলের হয়ে সভা সমিতি করলেন। মিছিল করেলন। দেওয়ালে জলজল করল তাঁদের নাম। নেহাত মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে পদত্যাগ করতেই হত, তাই করা।

চোখ ছিল এই দলবদলুদের দিকে। হ্যাঁ, তিনজনই পরাজিত। এটা অবশ্যই স্বস্তির। বিজেপির দু’‌জনের কথাও বলতে হয়। একজন অর্জুন সিং। যিনি বিজেপির টিকিটে জেতার পর এসেছিলেন তৃণমূলে। আবার তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে আবার রাতারাতি বিজেপি। টিকিটও পেয়ে গেলেন। তিনিও ব্যারাকপুর থেকে পরাজিত। তাপস রায় বিজেপির হয়ে প্রার্থী হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তিনি অন্তত বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে বিধায়ক পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এই নৈতিকতাটুকু দেখিয়েছেন। তাঁরা দুজনও হেরেছেন।

সবমিলিয়ে এই তৎকাল দলবদলুদের হারটা জরুরি ছিল। জনতার রায়কে যেভাবে তাঁরা নিলাম করেছেন, এই হারটুকু অন্তত তাঁদের প্রাপ্যই ছিল।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.