রক্তিম মিত্র
প্রথম কয়েক দফায় এমনটা দেখা যায়নি। ভোট মোটামুটি শান্তিতেই হয়েছে। কিন্তু ভোট পর্ব যতই এগোলো, শাসকের হুম্বিতুম্বি যেন বাড়তে লাগল। ভোটের দিন যেখানেই বিরোধী প্রার্থীরা যাচ্ছেন, সেখানেই গো ব্যাক স্লোগান। মোদ্দা কথা, প্রার্থীকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
এই জাতীয় বিক্ষোভকে যতই এলাকাবাসীর বিক্ষোভ বলে চালানোর চেষ্টা হোক, এর সঙ্গে এলাকাবাসীর আবেগের কোনও সম্পর্কই নেই। এই জাতীয় বিক্ষোভ মোটেই স্বতস্ফূর্ত নয়। একেবারেই রাজনৈতিক। এবং এই জাতীয় বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয়।
যাঁদের গ্রামগঞ্জ সম্পর্কে সামান্যতম ধারণা আছে, তাঁরা জানেন, বিরোধী প্রার্থী কোথায় যাচ্ছেন, তা জানা খুব একটা কঠিন নয়। মোবাইল মারফত দ্রুত জানিয়ে দেওয়া যায়। অর্থাৎ, যেখানে যাচ্ছেন, সেখানকার মানুষদের সতর্ক করে দেওয়া যায়। প্রার্থী যাচ্ছে, তোমরা তৈরি থাকো। এমন বিক্ষোভ দেখাও, যেন প্রার্থী বুথে ঢোকার সাহসই না পান।
প্রশ্ন হল, ভোটের দিন বুথের আশেপাশে কেন্দ্রীয় বাহিনীর থাকার কথা। বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গেও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাবাহিনী থাকে। তারপরেও রাজ্যের শাসক দল এমন বিক্ষোভ দেখানোর সাহস পায় কীভাবে? আসলে, তৃণমূল নেতৃত্ব খুব ভাল করেই জানেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে ঠিকই, কিন্তু তাঁদের কিছুই করার মুরোদ নেই। গুলি চালানো তো দূরের কথা, এমনকী লাঠি বের করতেও পারবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের যাঁরা মাথা, তাঁরা গুটিয়ে থাকার নির্দেশই দিয়েছে।
যদি একটা জায়গায় বাহিনী তার দায়িত্ব পালন করত, যদি এই বিক্ষোভ দেখানো ভাড়াটে লোকেদের একটু রাম প্যাঁদানি দিত, আর কোথাও এমন বিক্ষোভ দেখানোর সাহস হত না। অন্য দিন কোনও দল বিক্ষোভ দেখাতেই পারে। কিন্তু ভোটের দিন তো এই জাতীয় জমায়েত করা যায় না। সেদিন তো ১৪৪ ধারা থাকে। তারপরেও এমন ঘেরাও! এমন বিক্ষোভ! তাও আবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনে!
এত সাহস তারা পায় কোত্থেকে? এটা বিজেপি ভাবুক। দিল্লির যে নেতাদের ওপর তাঁরা ভরসা করেছিলেন, তাঁদের নির্দেশে বছরের পর বছর সিবিআই, ইডি ঘুমিয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘুমিয়ে রইল। এরপরেও এই মোদির নামে জয়ধ্বনি দিতে ইচ্ছে হয়!
এই রাজ্যে বিজেপির যে ভরাডুবি হতে চলেছে, তার জন্য অন্য কেউ দায়ী নন। দায়ী ওই নরেন্দ্র মোদিই। এই রাজ্যে তিনি মোটেই সম্পদ নন। তিনিই সবথেকে বড় বোঝা। এই সহজ সত্যিটা কবে যে বুঝবেন!