৪১ আসনে তৃণমূল জিতুক

হরিশ মুখার্জি

আমি প্রবল তৃণমূল বিরোধী। তারপরেও বলছি, এই রাজ্য থেকে তৃণমূল ৪১টি আসন পাক। আমার কোনও আপত্তি নেই। বিনিময়ে একটি আসনে তৃণমূলের হার চাই। সেটা হল ডায়মন্ড হারবার।

এই কেন্দ্রের প্রার্থীকে আমি কখনও চোখে দেখিনি। কোনও ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নেই। তবু আন্তরিকভাবেই চাই, তিনি হারুন। পরিচ্ছন্ন রাজনীতির স্বার্থে চাই, ডায়মন্ড হারবারের মানুষ তাঁকে প্রবলভাবে প্রত্যাখ্যান করুন।

এই মানুষটি পশ্চিমবঙ্গে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমদানি করেছেন, তা কখনই মেনে নিতে পারি না। এই মানুষটির হাতে আগামীদিনে বাংলার ক্ষমতা যেতে পারে, এটা ভেবে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে শিউরে উঠি। ইনি আদৌ রাজনৈতিক ব্যক্তি কিনা, তা নিয়েই ঘোর সংশয়।

তাঁর বিরুদ্ধে যে সব মারাত্মক অভিযোগ, তার এক শতাংশও যদি সত্যি হয়, সেটা মারাত্মক। বাংলায় আর কোনও রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে?‌ কেউ কেউ বলতেই পারেন, অভিযোগ উঠলেই তো হল না। প্রমাণ কই?‌ সত্যিই তো, প্রমাণ থাকবে কী করে?‌ প্রমাণ জোগাড় করা যাঁদের দায়িত্ব, তাঁরা যদি প্রমাণ লোপাটের দায়িত্ব নিয়ে নেন, তাহলে প্রমাণ পাওয়া সত্যিই দুষ্কর। তিনি কোথাও গেলে তিন হাজার পুলিশ মোতায়েন হয়, তাঁর বাড়ির পাশে যে নিরাপত্তা, ইতিপূর্বে এই বাংলায় আর কারও জন্য সেই স্তরের নিরাপত্তা দেখা যায়নি। তাঁর স্ত্রী বিমানবন্দরে আটক হলে গোটা বিধাননগর কমিশনারেট বিমানবন্দরে হাজির হয়ে যায়। তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকার কথাও নয়।

বলতেই পারেন, রাজ্য পুলিশ না হয় নিষ্ক্রিয়, কেন্দ্রীয় এজেন্সিও তো প্রমাণ দেখাতে পারল না। সিবিআই, ইডির দক্ষতার প্রতি আস্থা রেখেও বলতে হচ্ছে, এই মানুষটির অপকর্মের বিরুদ্ধে তাঁরাও যেন ভয়ঙ্করভাবে নিষ্ক্রিয়। আদালত বারবার ধাঁতানি দেয়, দুর্নীতির মাথাকে এজেন্সি আড়াল করতে চাইছে। তাই লোকদেখানো কিছু পদক্ষেপ নেওয়া। দশ ঘণ্টা জেরার পর যখন এই মানুষটি বাইরে বেরিয়ে দেড় ঘণ্টার প্রেস কনফারেন্স করেন, তখন রাগ তাঁর ওপর হয় না। রাগ হয় সেই অপদার্থ সিবিআই কর্তাদের ওপর। রাগ হয় সেই সিবিআইকে যাঁরা চালনা করছেন, তাঁদের ওপর। সিবিআই–‌ইডি আমার কাঁচকলা করবে, এমন কথা বলার স্পর্ধা তিনি পান কোথা থেকে?‌ পান, কারণ, সিবিআই–‌ইডি নিজেদের এই স্তরে নামিয়ে এনেছে। পান, কারণ, তিনি জানেন, রাজ্যে যেমন তাঁর পিসি আছেন, দিল্লিতেও তাঁর মামা আছেন। সেই মামারা যতদিন আছেন, ভাগ্নে ততদিন সুরক্ষিত। ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী নির্বাচন থেকেই সেটা আরও পরিষ্কার। দু’‌মাস ধরে বিস্তর হুঙ্কারের পর যে প্রার্থী সেখানে দেওয়া হল, তাকে পর্বতের মূষিকপ্রসব ছাড়া আর কী বলা যায়!‌

আগের লোকসভা নির্বাচনে আগাম লিখিত অভিযোগ ছিল, এই ৩৫৭ বুথে সন্ত্রাস হবে। দেখা গেল, বেছে বেছে সেই বুথগুলিতে কোনও কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই। সেই বুথের সিসিটিভি ফুটেজও পাওয়া যাচ্ছে না। আর সেইসব বুথে বিরোধীরা কোথাও একটি, কোথাও দুটি, কোথাও আবার শূন্য ভোট পেলেন। নিশ্চিত থাকুন, এবারও তেমনটাই হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনী সবথেকে বেশি ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে থাকবে এই একটি কেন্দ্রে। প্রধানমন্ত্রী এসে নাটকীয় ভঙ্গিতে চিৎপুরের যাত্রাপালা করবেন। ভাইপো ভাইপো বলে চিৎকার করবেন, ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতির বড়াই করবেন। কিন্তু তিনি আসলে কতটা দুর্বল, এই একটি জায়গায় বেশ বোঝা যায়। আসলে, অন্য কারও ভাইপো যে কবে তাঁর ভাগ্নে হয়ে গেছেন, তিনি নিজেও জানেন না।

হ্যাঁ, তিনি এতটাই প্রভাবশালী। তিনি রাজ্য পুলিশকে চালনা করেন। কেন্দ্রীয় এজেন্সি তাঁর কাছে ঠুঁটো জগন্নাথ। প্রমাণ ছাড়া কথা বলা অনুচিত। কিন্তু যাঁদের হাতে প্রমাণ জোগাড়ের দায়িত্ব, তাঁরা যদি আড়াল করার দায়িত্ব নিয়ে নেন, তখন মানুষেরই প্রকাশ্যে বলা ছাড়া কিছু করার থাকে না। এখনও বিশ্বাস করি, যেসব অভিযোগ আছে, তার প্রমাণের জন্য সিবিআই হওয়ার দরকার পড়ে না। একটু সদিচ্ছা থাকলে থানার সিভিক ভলান্টিয়ারই যথেষ্ট।

তাঁকে বাঁচাতে দেশের সেরা আইনজীবীরা আছেন। রাজ্য পুলিশ আছে, কেন্দ্রীয় এজেন্সি আছে। মিডিয়ার বড় একটা অংশ আছে। ভাড়াটে আইপ্যাক আছে। নীরব বুদ্ধিজীবীরা আছেন। সর্বোপরি কেন্দ্রীয় সরকারের মাথারা আছেন। কিন্তু জনতা প্রমাণ করে দিক, তাঁরাই সর্বশক্তিমান। তিনি কি সত্যই হারবেন?‌ এতখানি আশাবাদী না হওয়াই ভাল। তিনি জিতবেন এবং বেশ বড় ব্যবধানেই জিতবেন। কিন্তু তারপরেও চাই, জনতা তার শক্তি অন্তত একটিবার বুঝিয়ে দিক।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.