একটা ছবিতেই ট্যুর অপরারেটর হওয়ার ভূত মাথা থেকে নেমে গেল

সৌরদীপ সরকার

একটি ছবি ও তাকে ঘিরে নিজেদের ভাবনা বদল। এমনটাই আজ লিখতে ইচ্ছে করছে।
খুব ইচ্ছে ছিল, কয়েকজন বন্ধু মিলে পর্যটন ব্যবসা করব। আমরা চারজনই ঘুরতে ভালবাসি। কিন্তু কিছু একটা কাজ তো করতে হবে। সহজ কথা, ঘুরতে গেলে উপার্জন তো দরকার। যদি চাকরি করি, ছুটি পাওয়া মুশকিল। যদি ছুটি পাইও, সবাই একসঙ্গে পাব না। তাছাড়া, সারা বছর যদি পাঁচ–‌ছটা জায়গাও যেতে হয়, তার তো অনেক খরচ।

তাহলে কী করা যায়?‌ পার্থই প্রথম বুদ্ধিটা দিল। আমরা যদি ট্যুর ব্যবসা করি, তাহলে কেমন হয়। ওটাই কাজ, ওটাই উপার্জন। আবার লোকের টাকায় বেড়ানোও হয়ে গেল। আলাদা করে ছুটির দরকার নেই।

ভেবে দেখলাম, আইডিয়াটা মন্দ নয়। এমনিতেই ঘুরতে ভাসলবাসি। অনেক জায়গায় গেছি। আরও অনেক জায়গায় যেতে চাই। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে টুকটাক পরিচিতিও তৈরি হয়েছে। হোটেল বা গাড়ি পেতে সমস্যা হবে না। আমরা দারুণ দারুণ জায়গায় লোককে ঘোরাব। তারা ফিরে এসে প্রশংসা করবে, ফেসবুকে ছবি দেবে, আমাদের কথা লিখবে। সেই দেখে আরও লোক পিলপিল করে আসবে। সবাই চাইবে অল্প খরচে ব্যতিক্রমী জায়গায় যেতে।

chalo lets go
নিচের লিঙ্কে ক্লিক করলে ছবিটি দেখতে পারেন। চাইলে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

কয়েকদিন এই ভাবনার মধ্যেই কেটে গেল। একজন পরামর্শ দিল, একটা ছবি দেখতে। তাহলে কিছুটা আইডিয়া পাওয়া যাবে। কোন ছবি?‌ অঞ্জন দত্তর ‘‌চলো লেটস গো।’‌ সেখানে শাশ্বত আছে, পরমব্রত আছে, রুদ্রনীল আছে। অরিন্দম, সুজন, ঋত্বিক, কৌশিক, চুর্নী থেকে শুরু করে আরও অনেকেই আছে। বেড়ানো নিয়েই ছবিটা। ডুয়ার্সের ক্যানভাস ক্যামেরায় দারুণ ধরা পড়েছে। কিন্তু ট্যুর অপারেট করতে যে এত ঝামেলা পোহাতে হয়, তা কে জানত!‌ কারও পছন্দমতো রুম চাই, বাসে পছন্দমতো আসন চাই। কারও গিজার চলছে না, তো কারও বিছানার চাদর নোঙরা। কেউ চায়, বাসে গান চলুক, কেউ চায় নীরবে যেতে। কেউ চায় একটা জায়গা ভাল করে ঘুরে দেখতে, অন্যজন চায় একসঙ্গে অনেকগুলো জায়গা ছুঁয়ে যেতে। এমন গণতন্ত্র থাকলে আর দেখতে হচ্ছে না। ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি। টুকরো টুকরো কতরকমের ঝামেলা।

ওই সিনেমাতেও দেখেছিলাম, শেষপর্যন্ত ওই বন্ধুরাও আর ট্যুর ব্যবসা করেনি। যে যার নিজের নিজের ধান্দা খুঁজে নিয়েছিল। একটা ট্যুরেই ওরা বুঝে নিয়েছিল, এত ঝক্কি–‌ঝামেলা নেওয়া ওদের কম্ম নয়। আমরাও ওই একটা ছবি দেখেই বুঝলাম, নিজেরা বেড়াতে যাব, সেটাই ভাল। ট্যুর অপারেটর হওয়া আমাদের কম্ম নয়।

বলতে পারেন, ওই একটা ছবিই আমাদের চোখ খুলে দিয়ে গেল। থ্যাঙ্ক ইউ অঞ্জন দত্ত। ওই ছবিটা না দেখলে আমরাও হয়ত প্রবল উৎসাহে নেমে পড়তাম। হাবুডুবু খেতাম। একটা ছবিই কত কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেল।

(‌কোনও ছবি কি আপনার জীবন বদলে দিয়েছে?‌ এমন অভিজ্ঞতা থাকলে আপনিও লিখুন। ছবির কথা, আপনার অনুভূতির কথা। )‌

bengaltimes.in@gmail.com

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.