লঘুপাপে যেন গুরুদণ্ড না হয়

অভিরূপ কুমার

সুপ্রিম কোর্টের রায় সত্যিই অনেকটা স্বস্তি দিল। প্রথমেই বলে রাখি, আমি শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত নই। হয়তো সেই যোগ্যতাও আমার নেই। তাই আমার চাকরি চলে গিয়েছিল, এমন নয়। বা আমার আত্মীয়দের তালিকাতেও এমন কেউ নেই।
তবু হাইকোর্টের রায় মন থেকে মানতে পারছিলাম না। এক ধাক্কায় হাজার হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে যাবে, এটা সত্যিই কাম্য নয়। হতে পারে, সবার হয়তো যোগ্যতার নিরিখে হয়নি। হয়তো অনেকের নম্বর কমানো বা বাড়ানো হয়ে থাকতে পারে। তার মাঝে সবাই একেবারে অযোগ্য, এমনটাও নয়। হয়তো অন্যদের তুলনায় একটু কম যোগ্য।
সিবিআই, ইডি এতদিন ধরে তদন্ত করল। তারপরেও তাঁরা যোগ্য–‌অযোগ্যের তফাত করতে পারলেন না?‌ তাহলে তাঁরা কতটা যোগ্য, তা নিয়েও তো প্রশ্ন থেকে যায়। ধরেই নিলাম, প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু ঠিকমতো তদন্ত হলে তারপরেও যোগ্য–‌অযোগ্য আলাদা করা সম্ভব ছিল। অন্তত চেষ্টাটুকু তো করা যেত। তা না করে মুড়ি–‌মিছরি এক করে দেওয়া হল। একবার ভাবুন তো সেই যোগ্য চাকরি প্রাপকদের কথা। কে কোথায় অন্যায় করেছে বলে তাঁদের চাকরি চলে যাবে?‌ শুধু তাই নয়, পাড়া–‌পড়শি, আত্মীয়–‌স্বজনও বাঁকা চোখে দেখবে। কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না, তাঁর যোগ্যতার ভিত্তিতেই হয়েছিল। তিনি টিউশড়ি পড়াতে চাইলে বাবা–‌মা তাঁদের ছেলেমেয়েকে তাঁর কাছে ভর্তিও করতে চাইবেন না। সত্যিই কি এমন শাস্তি, এমন মানসিক হেনস্থা তাঁর প্রাপ্য ছিল?‌ ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেওয়ার আগে এই হাজার হাজার নির্দোষ শিক্ষকের কথা একবারও ভাবলেন না?‌ যাঁরা চাকরি বাতিলের দাবিতে সওয়াল করলেন, তাঁরাও ভাবলেন না?‌
যাঁদের হয়তো নিয়ম মেনে হয়নি, তাঁরা হয়তো অনিয়মের সুযোগ নিয়েছেন, কিন্তু তাই বলে তাঁরাও আর যাই হোক, ক্রিমিনাল নন। তাঁদের চাকরি গেল, এটা তবু না হয় মেনে নেওয়া গেল। তাই বলে আট বছরের মাইনে ফেরত দেওয়া!‌ তাও আবার বারো শতাংশ সুদ–‌সহ?‌ এটা কারও পক্ষেই ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব?‌ সত্যিই কি এতখানি শাস্তি তাঁদের প্রাপ্য?‌ ধন্যবাদ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় ও অন্যান্য বিচারপতিদের। তাঁরা অন্তত মানবিকভাবে বিষয়টা দেখেছেন। কিছু কিছু বিষয়ে সাময়িক একটা স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। মনে প্রাণে চাইব, এসএসসি যোগ্য–‌অযোগ্য তালিকা তৈরি করুক। যথাসময়ে আদালতে পেশ করুক। আর যেন কোনও জটিলতা তৈরি না হয়। যাঁরা যোগ্য শিক্ষক, তাঁরা মাথা উঁচু করে চাকরি করুন। যাঁরা হয়তো ততখানি যোগ্য নন, তাঁদেরও যেন লঘু পাপে গুরুদণ্ড না হয়।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.